বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তরুণদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। যদিও আমাদের দেশে এখনও এ বিষয়টি নতুন, কিন্তু এরই মধ্যে অনেকে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। পড়ালেখা শেষে বা পড়ালেখার সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সিং এ গড়ে নিতে পারেন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের একটা বিশাল বাজার। উন্নত দেশগুলো কাজের মূল্য কমানোর জন্য আউটসোর্সিং করে থাকে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত এবং পাকিস্তান সেই সুযোগটিকে খুবই ভালভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমরাও যদি ফ্রিল্যান্সিং এর বিশাল বাজারের সামান্য অংশ কাজে লাগাতে পারি তাহলে এটি হতে পারে আমাদের অর্থনীতি মজবুত করার শক্ত হাতিয়ার।
গতানুগতিক চাকুরীর বাইরে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ইন্টারনেটের কল্যানে এখন আপনি খুব সহজেই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। এখানে একদিকে যেরকম রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে বিভিন্নধরনের কাজ বাছাই করার স্বাধীনতা। আয়ের দিক থেকেও অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং এ রয়েছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। এখানে প্রতি মূহুর্তে নতুন নতুন কাজ আসছে। প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েবসাইট, গেম, 3D এনিমেশন, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সফ্টওয়্যার বাগ টেস্টিং, ডাটা এন্ট্রি – এর যেকোন এক বা একাধিক ক্ষেত্রে আপনি সফলভাবে নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করে নিতে পারেন। তবে প্রথমদিকে আপনাকে একটু ধ্যর্য এবং কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এই প্রতিবেদনটি তাই এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে আপনি একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে সফলভাবে প্রকাশ করতে পারেন।
ইন্টারনেটে অনেকগুলো জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস দেয় যাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। এগুলো থেকে যেকোন একটিতে রেজিস্ট্রিশনের মাধ্যমে আপনি শুরু করতে পারেন। এসব ওয়েবসাইটে যারা কাজ জমা দেয় তাদেরকে বলা হয় Buyer বা Client এবং যারা এই কাজগুলো সম্পন্ন করে তাদেরকে বলা হয় freelancer বা Service Provider. একটি কাজের জন্য অসংখ্য ফ্রিল্যান্সরা Bid বা আবেদন করে এবং ওই কাজটি কত টাকায় সম্পন্ন করতে পারবে তা উল্লেখ করে। এদের মধ্য থেকে ক্লায়েন্ট যাকে ইচ্ছা তাকে নির্বাচন করতে পারে। সাধারণত পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা, টাকার পরিমাণ এবং বিড করার সময় ফ্রিল্যান্সরের মন্তব্য ফ্রিল্যান্সর নির্বাচন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফ্রিল্যান্সর নির্বাচন করার পর ক্লায়েন্ট কাজের সম্পূর্ণ টাকা ওই সাইটগুলোতে জমা করে দেয়। এর মাধ্যমে কাজ শেষ হবার পর সাথে সাথে টাকা পাবার নিশ্চয়তা থাকে। পুরো সার্ভিসের জন্য ফ্রিল্যান্সরকে কাজের একটা নির্দিষ্ট অংশ ওই সাইটকে ফি বা কমিশন হিসেবে দিতে হয়। এই পরিমাণ ওয়েবসাইট এবং সার্ভিসভেদে ভিন্ন ভিন্ন (১০% থেকে ২০%)। কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট হচ্ছে:
www.freelancer.com ফ্রীল্যান্সিং এর জন্য ভাল একটি মার্কেটপ্লেস । অনেক বাংলাদেশী ফ্রীল্যান্সাররা এখানে দীর্ঘদিন থেকে সফলতার সাথে কাজ করছে। এই মার্কেটপ্লেসটি বাংলাদেশেও তাদের কার্যক্রম প্রসারের অংশ হিসেবে www.freelancer.com.bd চালু করে। এখানে ফিল্যান্সিং করার পাশাপাশি বিভিন্ন কন্টেস্টে অনংগ্রহন করেও টাকা উপার্জন করা যায়। ইতিমধ্যে অনেক বাংলাদেশী ফ্রীল্যান্সার বিভিন্ন কন্টেস্টে বিজয়ী হয়ে ভাল মাানের প্রাইজমানি লাভ করেছে।
www.upwork.com ফ্রীল্যান্সিং এর জন্য জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস । ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেসটি এতদিন পর্যন্ত ওডেস্ক Odesk.com নামে পরিচিত ছিল। ২০০৫ সালে অন্য অরেকটি জনপ্রিয় ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ইল্যান্স Elance.com এর সাথে একত্রিত হয়ে আপওয়ার্ক নাম ধারণ করে। এখানে একজন ফ্রিল্যান্সার নির্ধারিত মূল্যে বা ঘন্টা হিসেবে করতে পারে। ক্লায়েন্ট আপনাকে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস এর জন্য) নিয়োগ করতে পারে। রেজিষ্ট্রেশন করার সময় প্রতি ঘন্টায় আপনার কাজের মূল্য উল্লেখ করে দিতে হবে। কাজ শেষে আপনি যত ঘন্টা কাজ করেছেন ঠিক ততটুকু পরিমাণ টাকা ক্লায়েন্ট আপনাকে প্রদান করবে। কাজ করার মূহুর্তে আপনার ব্যয়কৃত সময় নির্ধারণ করার জন্য আপনাকে একটি সফ্টওয়্যার চালু রাখতে হবে, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনার ডেস্কটপের স্ক্রিসশট এবং অন্যান্য তথ্য ক্লায়েন্টের কাছে পাঠাবে। ফলে ওই সময় আপনি কাজ করছেন কিনা ক্লায়েন্ট সহজেই নির্ধারণ করতে পারবে। তবে অন্য সাইটগুলোর মত এখানেও অনেক কাজ পাওয়া যায় যেখানে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। এই সাইটে প্রতি কাজের জন্য ১০% টাকা কমিশন হিসেবে প্রদান করতে হয়। যেহেতু বেশিরভাগ কাজ ঘন্টা হিসেবে প্রদান করা হয় তাই অন্য সাইটগুলোর তুলনায় এই সাইট থেকে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব। আপওয়ার্ক কিভাবে কাজ করবেন বিস্তারিত জানতে এই http://www.freelancerstory.com/category/upwork/ লিংকের আর্টিকেলগুলো দেখুন।
পিপল পার আওয়ার বা “পিপিএইচ” (PeoplePerHour.com) হচ্ছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। প্রচলিত অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন কাজ আউটসোর্স বা ফ্রীল্যান্সিং করবার জন্য সুযোগ দিয়ে থাকে তাদের মতোই একটি স্কিল বিক্রি করবার মার্কেটপ্লেস।
পিপিএইচ একটি অনলাইন ফ্রীল্যান্স মার্কেট প্লেস,আট দশটি মার্কেট প্লেসের মতো এখানেও কাজের আদান প্রদান হয়,তবে মৌলিক কাঠামো এক হলেও বেশ কিছু ফিচার আছে পিপিএইচের যা কিনা অন্য মার্কেটপ্লেসের থেকে ভিন্ন,একটু আলাদা আর আকর্ষনীয়।
আরেক ভাষায় পিপিএইচ হচ্ছে একটি ক্রাউডসোর্সিং প্লাটফর্ম অর্থাৎ প্রফেশনাল অফিসের সরনাপন্ন না হয়ে যদি কোনো ব্যাবসায়ী বা ক্রেতা সুনির্দিষ্ট কোনো সার্ভিস বা কাজ অনলাইন কমিউনিটি,এই ক্ষেত্রে ফ্রীল্যান্সার বা আউটসোর্সারদের কাছ থেকে নিলাম করে কিনে নেয় তবে তাকে ক্রাউডসোর্স বলা যেতে পারে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরন পিপিএইচ।
এখানে কন্ট্রাক্টর তথা কাজ যিনি দিতে চাইছেন বায়ার হিসেবে সেই জব পোস্ট করতে পারেন অনায়াসেই, আবার যিনি কারিগর তথা কাজ আউটসোর্স করবেন তিনিও পারেন সেলার হিসেবে তার দক্ষতা বিক্রি করতে। একই সাথে একজন কাজ কিনতে পারবেন,আবার তা বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করতে পারবেন,যেখান থেকে হাজার হাজার বায়ার বা ক্লায়েন্ট পছন্দসই কাজ বেছে নিতে সক্ষম হবেন।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, তবে বিশ্বব্যাপি সমাদ্রিত হতে বেশ কিছু বৈশিষ্ঠের প্রয়োজন হয় প্রতিটি মার্কেটপ্লেসের, যেমন, গ্রহনযোগ্যতা, কাজের সুযোগ, প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য, অর্থকরি উত্তলনের সুব্যাবস্থা ইত্যাদি।
পিপিএইচ খুব বেশিদিন হয় নি তাদের যাত্রা শুরু করেছে, ২০০৭ এ জিনিওস ত্রিসিভালু ও সিমস কিতারেস সম্মিলিতভাবে চালু করে ওয়েব-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। শাখা রয়েছে লন্ডন আর নিউইয়র্ক শহরে।এই মুহুর্তে পিপিএইচে অ্যাক্টিভ ইউজারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ, তন্মধ্যে এক লাখ আশি হাজার ফ্রীল্যান্সার এবং সত্তর হাজার ক্লায়েন্ট বা বায়ার।বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট বা বায়ারেরা ফুল টাইম প্রফেশনাল কোম্পানির বদলে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ক্ষুদ্র উদ্যোগে গড়ে ওঠা একক ফ্রীল্যান্সারদের।