ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ঠিক কখন থেকে এই রুটি হালুয়ার চল হয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য মেলে না। তবে দুটি অভিমত পাওয়া যায়, একটি হল ঢাকাইয়া অন্যান্য সকল বিষয়ের মত এই প্রথাও মোঘলদের হাত ধরে এসেছিল এই বাংলায়। ধীরে ধীরে তা সাধারণ সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আরেকটি মতামত হল। খাজা মাঈনুদ্দিন চিশতিয়া যখন এই উপপহাদেশে আসেন তখনকার মুসলিম সমাজের লোকেরা খুবই গরীব ছিল। আর তখন গরীব ভিক্ষুকদের টাকা পয়সা ভিক্ষা দেয়ার প্রচলন ছিল না। তখন গরীব দুঃখীদের খাদ্য দান করা হত। পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৫ শাবান রাত হচ্ছে শবেবরাত। এ রাতের অশেষ ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বছরের পাঁচটি শ্রেষ্ঠ রজনীর অন্যতম এ শবেবরাত। এ রাতের করণীয় সম্পর্কে রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ১৫ শাবান রাতে তোমরা জেগে থেকে ইবাদত কর এবং পরদিন রোযা রাখ। এ জন্য শবেবরাতে জেগে থেকে ইবাদত করা এবং পরদিন রোযা রাখা বিশেষ সওয়াবের কাজ। শবে বরাতে দান করাও খুব ফজিলত পূর্ন। গরীবদের মাঝে দান করার জন্যে তখনকার মুসলমানেরা রুটি বানিয়ে হালুয়া সহকারে বিলানো হত। সেই থেকেই শবে বরাতে রুটি হালুয়া বিলানোর প্রচলন চলে আসছে।
আরেকটি রেফারেন্স হতে যা পাওয়া যায় তা অনেকটা এরকম, পূর্ববর্তী যামানায় বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেস্তোরাঁ ইত্যাদি সর্বত্র ছিল না। তখন মানুষ সাধারণত সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুছাফিরখানা ইত্যাদিতে সফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণত সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। বিশেষ করে মুসাফিরগণ উনারা পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফ উনার মধ্যে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন উনাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও পরের দিন রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ উনারা খাবারের ব্যবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়। আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশত-রুটি খাওয়া সুন্নত, সেহেতু উনারা হালুয়া-রুটি বা গোশত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশত। উনারা ভাত, মাছ ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ঢাকাই খাবার গ্রন্থে রফিকুল ইসলাম রফিক লিখেছেন, “শবে বরাতের দিন বিকেল থেকেই ভিক্ষুকদের খাবার বিতরণ করা হয়। সামর্থ্য অনুযায়ী আটা বা ময়দার রুটি বিলি করা হয়। এ জন্য বেকারিতে তৈরি হয় শবে বরাতি রুটি। এসব রুটি পাখি, কুমির, মাছ, কুলাসহ বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কাচের টুকরা, আয়না, মার্বেল প্রভৃতি দিয়ে অলংকৃত করা হয় শবে বরাতি রুটি। এ রুটি বড় ট্রে বা খাঞ্চায় করে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠানো হয়।"
আ ক ম আজাদ আস্ক প্রশ্ন ডটকমের সাথে আছেন সমন্বয়ক হিসাবে। বর্তমানে তিনি একজন শিক্ষক। আস্ক প্রশ্ন ডটকমকে বাছাই করে নিয়েছেন জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হিসাবে। ভবিষ্যতে একজন বক্তা ও লেখক হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই আশা পূর্ণতা পেতে সকলের নিকট দু'আপার্থী।