মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্যের ব্যপারে দুইটি মতামত
বর্তমানে পাওয়া যায়।
এক. মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্যের ব্যপারে
বৈজ্ঞানিকদের মত:
বিগ ব্যাং বা বিশাল বিস্ফোরণ। এই বিশাল
বিস্ফোরণের ফলে আমাদের এই পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-
নক্ষত্র ইত্যাদির সৃষ্টি। প্রায় দেড় হাজার কোটি বছর
(বা এক হাজার ৩৭০ কোটি বছর) আগে মহাকাশে দু ’ টি
বিশাল নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ওই দুটি নক্ষত্র
বা বিশাল বস ' ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভাঙা
অংশগুলোই কোটি কোটি বছরের বিবর্তনে পৃথিবী , গ্রহ ,
উপগ্রহ, উল্কা , নক্ষত্র ইত্যাদিতে পরিণত হয়।
এ বিগ ব্যাং তত্ত্ব বাস-বে পরীক্ষা করে দেখার জন্য
ইউরোপের বিজ্ঞানীরা সম্মিলিতভাবে এলএইচসি
যন্ত্রটি তৈরি করেন। এখানে পরমাণুকে ভাঙার
পাশাপাশি দু ’ দিক থেকে আলোর গতিতে ছুটে আসা
পরমাণু অপর পরমাণুর বা আলোর রশ্মির মধ্যে সংঘর্ষ
ঘটানো হবে। সংঘর্ষের ফলে কি অবস্থার সৃষ্টি হয়
সেটি পরীক্ষা করে তারা মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য
সম্পর্কে একটা কূলকিনারা করতে পারবেন। এছাড়া ওই
যন্ত্রের সাহায্যে মহাবিশ্বের সুপার সিমেট্রি এর
বিষয়েও অনেক কিছু জানা যাবে।
সানের প্রধান ফরাসী পদার্থ বিজ্ঞানী রবার্ট আয়মায়
জানিয়েছেন, তাদের পরীক্ষা শেষ পর্যন- সফল হলে
মানব সভ্যতা অকেনক দূর এগিয়ে যাবে। ইউনিভার্সিটি
অব মিসিগ্যানের জেরবাউস টি হুকট এ পরীক্ষার প্রধান
যন্ত্র এলএইচসি মেশিন প্রসঙ্গে বলেন, এটি তাদের এমন
সব জিনিস দেখাবে যার অসি-ত্ব সম্পর্কে তারা কিছুই
জানতেন না।
এটি একটি বিস্ময়কর ও অত্যন- ব্যায়বহুল যন্ত্র। যন্ত্রটি
তৈরি করতে সময় লেগেছে টানা ২০ বছর। খরচ হয়েছে
৫৬০ কোটি ডলার। যন্ত্রটিতে ২ হাজার চুম্বকীয়
সার্কিট রয়েছে। সুইজারল্যন্ড-ফ্রান্স সীমানে- মাটির
১৬০ ফুট থেকে ৩০০ফুট গভীরে এটি বসানো হয়েছে।
যন্ত্রটির পরিধি ২৭ কিলোমিটার। এর সাহায্যে প্রায়
আলোর গতিতে পরমাণুকে ভাঙ্গা যায়। এটি প্রতি
সেকেন্ডে ১১ হাজার পরমাণু ভাঙ্গতে পারে। বিশ্বের
১০ হাজার বিজ্ঞানী এলএইচসির কার্যক্রম মনিটরে
প্রত্যক্ষ করবেন। বিজ্ঞানীরা সামনে এ যন্ত্রের
মাধ্যমে প্রোটন ভেঙ্গে বিশাল আলোকরশ্মি সৃষ্টি ও
সেগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানোর পরিকল্পনা করছেন।
(বৃহস্পতিবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮)
বিশ্লেষণ:
বৈজ্ঞানিকগণ পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য ও তার বয়স নিয়ে
গবেষণা করতে করতে দেখে যে , এক হাজার ৩৭০ কোটি
বছর পূর্বে একটা বিশাল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া
যায়। আর তখন থেকেই পৃথিবীর অসি-ত্ব পাওয়া যায়।
বিস্ফোরণের ব্যাক্ষা বৈজ্ঞানিকগণ এভাবে দেন যে,
ব্ল্যাকহোল বা মহাকাশে দু ’ টি বিশাল নক্ষত্র বা অন্য
কোনো বস র মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল , এতে ওই দুটি
নক্ষত্র বা বিশাল বস ' ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই
ভাঙা অংশগুলোই কোটি কোটি বছরের বিবর্তনে
পৃথিবী , গ্রহ , উপগ্রহ, উল্কা , নক্ষত্র ইত্যাদিতে পরিণত
হয়।
দুই. মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্যের ব্যপারে ইসলামের মত:
পৃথিবী সৃষ্টি ব্যপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।
যেমনিভাবে সৃষ্টি করেছেন অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রসমুহকে
।
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করার কৌশল বর্ণনা করতে
গিয়ে বলেছেন। (আল্লাহর ভাষায়)
“ আমি যখন কোন বস ' সৃষ্টি করার ইচ্ছা করি, তখন শুধু
বলি ‘‘ হও ” সঙ্গে সঙ্গে তা সৃষ্টি হয়ে যায় ” ।
আল্লাহ তায়ালা আসমান, জমিন ও তন্মধ্যস' সবকিছু ছয়
দিনে সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে আবার পৃথিবীকে সৃষ্টি
করেছেন দুই দিনে। পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনা ন্বি রুপ:
প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা তার কুরসী (সিংহাসন) -এর
নীচে ইয়াকুত/মারওয়ারীদের একটি দানা সৃষ্টি করেন।
যার দৈর্ঘ্য ও প্রস ' পাঁচশ বছরের রাস-ার সমপরিমাণ।
সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা যখন সেটির প্রতি তাকান ,
তখন সেটি আল্লাহর ভয়ে আপনা আপনিই পানি হয়ে
যায়।
অতপর আল্লাহ তায়ালা চতুর্মুখী বাতাস সৃষ্টি করেন।
তাকে নির্দেশ দিলেন-তোমরা পানির চার কোণায়
তরঙ্গ সৃষ্টি করে তাতে ফেনা বের কর।
নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে বাতাস তাই করল। এর পর আল্লাহর
কুদরতে ধোঁয়াযুক্ত আগুন সৃষ্টি হয়ে সেই পানির উপর
পতিত হয় এবং পানি হতে ধোঁয়া নির্গত হয়ে পানি ও
কুরসীর মধ্যখানে বাতাসে ঝুলতে থাকে। পানি ও
কুরসীর মধ্যখানে ঝুলন- ধোঁয়াকে আল্লাহ তায়ালা সাত
ভাগ করে তামা , লোহা , রৌপ্য , স্বর্ণ , মারওয়ারীদ
এবং লাল ইয়াকুত সৃষ্টি করেন।
অতপর সেই পানির এক ভাগ দ্বারা প্রথম আসমান,
দ্বিতীয় আসমান তামার, তৃতীয় আসমান লোহার , চতুর্থ
আসমান রৌপ্যের , পঞ্চম আসমান স্বর্ণের , ষষ্ঠ আসমান
মারওয়ারীদের আর সপ্তম আসমান লাল ইয়াকুতের দ্বারা
তৈরী করেন। প্রত্যেক আসমানের মধ্যখানে পাঁচশত
বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করেন।
আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরতে কুরসীর নীচে সৃষ্ট ইয়াকুত
বা মারওয়ারীদ হতে তৈরী পানিতে সৃষ্ট ফেনা থেকে
লাল মাটির এক স ' প সৃষ্টি করেন , যেখানে বর্তমানে
কাবা ঘর বিদ্যমান।
অতঃপর ফেরেশতাদের আদেশ দেয়া হলো তোমরা এই
লাল মাটি চারি দিকে ছড়িয়ে দাও। তারা সেই
নির্দেশ পালন করেন। আর জমিন সেই লাল মাটির স্তুপ
থেকেই সৃষ্টি হয়।