ওইদিন (১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্র-যুবক হতাহত হন। সেদিন শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার প্রতিবাদে পুরো পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নানা নির্যাতনের পরও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। ছাত্রদের আন্দােলনের পাশাপাশি পূর্ব বঙ্গের আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতামতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকেন। একই সময়ে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত আইন পরিষদের সদস্যদের সভাস্থল ঘিরে রাখে পুলিশ। এর ২ ঘণ্টা পর ছাত্ররা প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে তাদের সতর্ক করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এসময়ে কিছু ছাত্র বের হতে পারলেও অনেকে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে অনুরোধ জানালেও ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে। ছাত্রদের গ্রেফতারের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ২টার দিকে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। ছাত্ররা প্রথমে আইন পরিষদের সদস্যদের আইনসভায় যোগ দিতে বাধা দিলেও পরে সিদ্ধান্ত নেয় তারা (ছাত্ররা) আইনসভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবে। কিন্তু ছাত্ররা আইনসভার দিকে রওনা করলে ৩টার দিকে পুলিশ ছাত্রাবাসে ঢুকে গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া অহিউল্লাহ নামের একজন ৮/৯ বছরেরে কিশোরসহ নিহত হয় আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে। ছাত্রদের হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের আন্দোলন জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। দ্রুত ভূমিকা নেয় সংস্কৃতি জগতের লোকজনও। রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহ্বান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে। গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি চললেও পুলিশের গুলির খবর জানতে পেরে মাওলানা তর্কবাগিশসহ বিরোধী দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান।