বাংলাদেশের চরগুলিকে পাঁচটি উপ-এলাকায় ভাগ করা হয়েছে, যথা- যমুনা নদী, গঙ্গা নদী, পদ্মা নদী, আপার মেঘনা এবং লোয়ার মেঘনা নদীর চরসমূহ। এ সকল চর ছাড়াও অন্যান্য চর রয়েছে, যেমন- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী এবং তিস্তা নদীর চরসমূহ ইত্যাদি। তবে প্রধান প্রধান নদীর চরগুলির তুলনায় এ সকল চর খুবই সামান্য ভূমি নিয়ে গঠিত। ১৯৯৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে চরভূমির মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১,৭২২ বর্গ কিমি। উপ-এলাকার বর্ণনা হলো-
১. ১৯৯২ সালে শুষ্ক মৌসুমে তোলা ল্যান্ডস্যাটের প্রতিচ্ছবি (Landsat image) থেকে দেখা যায়, যমুনা নদীতে ৫৬টি বৃহৎ চর ছিল যাদের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ছিল ৩.৫ কিমি-এরও বেশি। এগুলি ছাড়াও আরও ২২৬টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর গড়ে উঠেছিলো যাদের দৈর্ঘ্য ছিল ০.৩৫ এবং ৩.৫ কিলোমিটার।
২. ১৯৯৩ সালে গঙ্গা নদীর তীরবর্তী উদ্ভিজ্জ আচ্ছাদিত মোট চর ছিল ৩৫% এবং যমুনা নদীর তীরবর্তী উদ্ভিজ্জ আচ্ছাদিত মোট চর ছিল ৪৩%। বিনুনি এবং সর্পিলাকৃতি নদীর দুই ধরনের (সংযুক্ত এবং দ্বীপ চর) চরেরই রয়েছে পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য। উল্লিখিত সময়ে সংযুক্ত চর এলাকা থেকে দ্বীপ চর এলাকার অনুপাত গঙ্গা নদীতে ছিল ১.৬ এবং যমুনা নদীতে এ অনুপাত ছিল প্রায় ১.০।
৩. ১৯৯৩ সালের শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে মোট ১৩টি দ্বীপচর বিদ্যমান ছিল। প্রতিটি চরের দৈর্ঘ্য ছিল ৩.৫ কিলোমিটারেরও বেশি এবং অতিরিক্ত ১৮টি দ্বীপচরের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ছিল ০.৩৫ এবং ৩.৫ কিলোমিটারের মধ্যে। এ সকল চরের মধ্যে উদ্ভিদ আচ্ছাদিত এবং উন্মুক্ত বালুচরও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৪. আপার মেঘনা নদীর তীরবর্তী মোট এলাকার ৩৮ ভাগই চর নিয়ে গঠিত। মেঘনা নদীর নিম্নতর অংশ তথা নদীর ভাটিতে গড়ে ওঠা চরগুলির বৈশিষ্ট্য পদ্মা ও আপার মেঘনা নদীর সঙ্গমস্থলে গড়ে ওঠা চরগুলির বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা। সঙ্গমস্থলে নদী খুবই প্রশস্ততা লাভ করায় চর গঠনের এলাকার পরিমাণও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে মেঘনার প্রশস্তায়নের ফলে প্রায় ৪,৫০০ হেক্টর ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একই সময়কালে উদ্ভিদ আচ্ছাদিত চরের বৃদ্ধিও সাধিত হয়েছে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩,০০০ হেক্টর। অন্যদিকে চাঁদপুরের নিম্নাংশে লোয়ার মেঘনা নদীপ্রবাহে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। ১৯৮৪ সালে নদীতীরে উদ্ভিদ আচ্ছাদিত চরের পরিমাণ ছিল মোট তীরভূমির মাত্র ২.৫ শতাংশ।
৫. ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে প্রায় ১৪,৫০০ হেক্টর এলাকা ভাঙনের মাধ্যমে নদী ব্যাপক প্রশস্ততা লাভ করেছে। নদীর তীর ভাঙনের পাশাপাশি নতুন নতুন চর গঠন প্রক্রিয়াও ছিল সক্রিয়। এরূপে উদ্ভিদ আচ্ছাদিত চরের পরিমাণ ১৯৮৪ সালের ৯০০ হেক্টর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯৩ সালে ৪,৬০০ হেক্টরে দাঁড়ায়।