হোস্টিং কি?
সহজ ভাষায় হোস্টিং হচ্ছে ইন্টারনেটে কোন একটি জায়গা, যেখানে আপনি আপনার কোন তথ্য রাখবেন এবং তা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন এমন একটি মাধ্যম। সাধারনভাবে, আমার কোন একটি ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিং ব্যবহার করি। কারণ, ওয়েবসাইটের টেক্সট, ইমেজ, অন্যান্য ফাইল, অডিও/ভিডিও কন্টেন্ট (যদি থাকে) এগুলো ওয়েবসাইটে দেখানোর জন্য আমাদের হোস্টিং ব্যবহার করতে হয়। হোস্টিং ছাড়া, ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট চালাতে পারবেন না। যেমনঃ microsoft.com, facebook.com, google.com প্রতিটিই আলাদা আলাদা হোস্টিং-এ চলে। ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি অনুযায়ী হোস্টিং-এর সাইজ (MB/GB) এবং দাম নির্ভর করবে।
হোস্টিং কয়েক ধরণেরঃ
১। শেয়ারড হোস্টিংঃ সাধারনত ব্যক্তিগত বা ছোট থেকে মাঝারি সাইজের ব্যবসায়ের ওয়েবসাইট, যেগুলোতে মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার বা সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ভিজিটর আসবে, এমন ওয়েবসাইট চালানোর শেয়ার্ড হোস্টিং ব্যবহার করা হয়। নূন্যতম ১জিবি থেকে শুরু করে ১০জিবি পর্যন্ত শেয়ারড হোস্টিং ইউজ করা হয়। এর বেশি দরকার হলে, হোস্টিং প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করে প্যাকেজ আপগ্রেড করে নেয়া যায়।
২। রিসেলার হোস্টিংঃ এটি মূলত হোস্টিং ব্যবসায়ের জন্য নেয়া হয়। যেমনঃ আপনি আমার থেকে ১০/২৫/৫০ জিবি বা তারও বেশি রিসেলার সিস্টেমে হোস্টিং কিনে নিয়ে অন্যের কাছে সেল করে ব্যবসা করবেন। শেয়ারড হোস্টিং থেকে এখানে বাড়তি সুবিধা পাবেন। তবে, যাদের হোস্টিং ব্যবসা করার ইচ্ছে আছে, এটি শুধু তাদের জন্যই প্রযোজ্য।
৩। ভিপিএস হোস্টিংঃ এটি ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত দুই ধরণের কাজেই ব্যবহার করা হয়। VPS অর্থ হচ্ছে Virtual Private Server। একই সাথে শেয়ারড এবং রিসেলার হোস্টিং প্যাকেজ তৈরি করতে পারবেন। শেয়ারড হোস্টিং যেখানে একই সাথে অনেকগুলো সাইট চলে, তাই শেয়ারড সার্ভারে লোড থাকে তুলনামূলক বেশি। কিন্তু, ভিপিএস সার্ভার নিয়ে কাজ করলে আপনি আপনার ফুল রিসোর্স একাই ইউজ করতে পারবেন, এতে আপনার সাইট দ্রুত গতিতে লোড হবে এবং একই সাথে অনেক বেশি ভিজিটর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হবে। যেকারণে এটিকে সার্ভার বলা হয়। ভিপিএস সার্ভারের ব্যয় শেয়ারড সার্ভার থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি। আপনার বাজেট এবং বিজনেস স্ট্রেটেজি ভাল থাকলে ভিপিএস সার্ভার চালাতে পারেন। ভিপিএস সার্ভার র্যাম এবং সিপিইউ কনফিগারেশন অনুযায়ী নেয়া হয়ে থাকে। যে সার্ভারে র্যাম এবং সিপিইউ কোর বেশি, সেই সার্ভার তত বেশি ফাস্ট। ভিপিএস সার্ভার মান্থলি রিনিউ সিস্টেমে নেয়া হয়। এই সার্ভারের দাম কনফিগারেশন অনুযায়ী মাসে আনুমানিক ৪৫ থেকে ১২০ ডলার পর্যন্ত।
৪। ডেডিকেটেড সার্ভারঃ ডেডিকেটেড সার্ভার সিমিলারলি ভিপিএস হোস্টিং। এই সার্ভার অন্যান্য সার্ভার থেকে অনেক বড় সাইজ এবং কনফিগারেশনের হয়ে থাকে। ডেডিকেটেড সার্ভার ৫০০জিবি থেকে ২/৩/৫ টিবি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডেডিকেটেড সার্ভার থেকে আপনি চাইলে সব ধরণের হোস্টিং প্যাকেজ তৈরি করতে পারবেন। এই সার্ভারও র্যাম এবং সিপিইউ কনফিগারেশন অনুযায়ী নেয়া হয়ে থাকে। বড় কোন কোম্পানি যারা একই সাথে হাই এ্যাঙ্গেজমেন্টের একাধিক ওয়েবসাইট চালান তাদের জন্য ডেডিকেটেড হোস্টিং উপযুক্ত। ডেডিকেটেড সার্ভারও মান্থলি রিনিউ সিস্টেমে নেয়া হয়। এই সার্ভারের দাম কনফিগারেশন অনুযায়ী মাসে আনুমানিক ৮০ থেকে ২৫০ ডলার পর্যন্ত।
কোথায় থেকে ডোমেইন হোস্টিং কিনবেন?
ডোমেইন হোস্টিং কোথায় থেকে কিবেন সেটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দের শেষ নাই আমাদের মাঝে। দেশি বা বিদেশি কোম্পানি থেকে হোস্টিং নেয়া নিয়েও রয়েছে নানান মতভেদ। তবে, ব্যাপারটি সম্পুর্ন পরিস্থিতি এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। তবে, আপনি প্রেফার করি শুরুর দিকে বা সবসময় দেশি কোম্পানি থেকে ডোমেইন হোস্টিং নেয়া। কারণঃ
১। সরাসরি ফোন কলে সাপোর্ট পাবেন। বাহিরের কোম্পানির মত ওয়েটিং লিস্টে থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
২। অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে পে করার ঝামেলা পোহাতে হবে না।
৩। আপনার ছোটখাট ইস্যুতে ওয়েবসাইট সাসপেন্ড করে এক্সটা চার্জ নিবে না (সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না)।
৪। রিনিউয়ালে টাকা প্রবলেমে থাকলেও সাইট ডাউন থাকবেনা, যদি ভাল সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেন। এটা অনেক বড় সাপোর্ট।
৫। সাপোর্ট টিকেট রিকোয়েস্ট দিয়ে দিন গুনতে হবে না। সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টার মধ্যে রিপ্লে/সল্যুশন পাবেন।
এছাড়াও দেশি কোম্পানি থেকে ডোমেইন হোস্টিং নেয়ার আরও অনেক সুবিধা আছে, যা শুধুমাত্র সার্ভিস দেয়ার পরই বুঝতে পারবেন।
আশা করি ডোমেইন হোস্টিং-এর ব্যাপারে আপনাদের ধারণা এখন অনেকটাই ক্লিয়ার।