পেঁপে বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান ফল, যা সবজি হিসেবেও খাওয়া যায় এবং সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপের পুষ্টিমাণ অনেক হওয়ায় মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে এটি ভালো ভমিকা রাখে। কথায় আছে ‘দৈনিক একটি করে পেঁপে খাও, ডাক্তার বৈদ্য দূরে তাড়াও’। পেঁপে গাছের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে থাকে। পুরুষ ফুলের বোঁটা লম্বা এবং ঝুলে থাকে এবং স্ত্রী ফুল বোঁটাহীন হয়। দেশের বিভিন্ন স্হানে পেঁপে ব্যবসায়িকভাবে চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে ৫৪২০ একর জমিতে ১২৩৭০ মেট্রিকটন পেঁপের চাষ করা হয়। পেঁপের ইংরেজি নাম Papaya এবং বৈজ্ঞানিক নাম Carica Papaya.
পুষ্টিমাণ পেঁপের প্রতি ১০০ গ্রামে নিম্নলিখিত পুষ্টি রয়েছে-
উপাদান
পরিমাণ
কাঁচা পেঁপে
পাকা পেঁপে
জলীয় অংশ
৯০.৭
৮৮.৪ গ্রাম
মোট খনিজ পদার্থ
১.৩
০.৭ গ্রাম
আঁশ
০.৯
০.৮ গ্রাম
খাদ্য শক্তি
৩৬
৪২ কিলোক্যালরী
আমিষ
০.৯
১.৯ গ্রাম
চর্বি
০.৮
০.২ গ্রাম
শর্করা
৬.৪
৮.৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম
১৩
৩১ মিলিগ্রাম
আয়রন
০.৯
০.৫ মিলিগ্রাম
ক্যারোটিন
৫৬০
৮১০০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন-বি-১
০.৪০
০.০৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-বি-২
০.০২
০.০৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-সি
৬
৫৭ মিলিগ্রাম
সূত্র: পেঁপের পুষ্টিমাণ ও ব্যবহার, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)
যে সব জায়গায় বেশি পরিমাণে চাষ হয় বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, নাটোর, যশোর, নরসিংদী, খুলনা এলাকায় পেঁপে চাষ হয়। এছাড়াও বগুড়ার লাঠিগঞ্জ, গাবতলী উপজেলা, নামুজা, বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ-এর গুজিয়া, আইলাঘাট, মোকামতলা পেঁপে চাষের জন্য সুপরিচিত।
জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইস্টিটিউট ১৯৯২ সালে উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল একটি পেঁপের জাত আবিষ্কার করেছে। এ জাতটির নাম “শাহী” যা “বারি পেঁপে-১” নামেও পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য
আকার: শাহী পেঁপে ১.৬ থেকে ২.০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট বহুবর্ষী (বহু বছর বাঁচে যে গাছ) গাছ। কান্ডের খুব নীচু থেকে ফল ধরে। ফল আকৃতি ডিমের মতো । ওজন: ৮৫০ থেকে ১০০০ গ্রাম। শাসের রং: গাঢ় কমলা এবং পুরুত্ব ১ ইঞ্চি (প্রায় ২ সেমি)। বীজের সংখ্যা: ফল প্রতি বীজের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৫৫০ টি। ফলের সংখ্যা: গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০টি। ফলের টিএসএস ১২%। ফলন: ১ হেক্টর জমি থেকে ৫০ টন পর্যন্ত পেঁপে পাওয়া যায়।
এছাড়া ওয়াশিংটন, হানিডিউ, রাঁচি, ইত্যাদি জাতের চাষ হয়ে থাকে। পুষাজায়েন্ট, পুষা ম্যাজেষ্টি, সলো ইত্যাদি জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।
পেঁপে চাষে কি লাভ? • স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়; • এটা বেশি লাভজনক: • এটির পুষ্টিগুণ খুব বেশি: • রমজান মাসে এর চাহিদা অনেক বেশি হয়; • খরচ খুব কম, এক বিঘাতে (৩৩ শতাংশ) মাত্র ৬০০০ টাকা খরচ হয়: • পেঁপের সাথে পেঁয়াজ, মরিচ, পুইশাঁক ও লালশাক করা যায়; • কাঁচা অবস্হায় তরকারী এবং পাকা অবস্হায় ফল হিসাবে খাওয়া যায়।
স্হান নির্বাচন/চাষের জন্য পরিবেশ ও মাটি/জমি তৈরি
স্হান নির্বাচন পানি দাঁড়াতে পারেনা এমন উর্বর জমি পেঁপের জন্য নির্বাচন করতে হয়। সাধারণত: উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি পেঁপে চাষের জন্য ভাল।
চাষের জন্য পরিবেশ ও মাটি
জলবায়ু
তাপমাত্রা
মাটির ধরন
উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ায় পেঁপে ভাল জন্মে, কুয়াশা ও শীতে পেঁপে চাষে খুব সমস্যা হয়। পাতাসহ গাছ পচে যায়।
২১ থেকে ৩০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা পেঁপের বৃদ্ধির জন্য ভাল। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পেঁপে সবখানে লাভজনকভাবে চাষ করা যেতে পারে।
এঁটেল মাটিতে (লাল মাটি) পেঁপে খুব ভাল চাষ হয়। এঁটেল মাটিতে চাষকৃত পেঁপে খুব মিষ্টি হয়। তবে সঠিকভাবে যত্ন নিলে প্রায় সব ধরনের মাটিতেই পেঁপের চাষ করা যায়।
জমি তৈরি জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে সমতল করতে হবে ও পানি সরে যাওয়ার জন্য নালা রাখতে হবে যাতে করে জমিতে পানি আটকে না থাকে।
রোপণ পদ্ধতি ও রোপণ সময়
রোপণ পদ্ধতি
পেঁপের জন্য প্রচুর সূর্যের আলো প্রয়োজন। এ জন্য চার হাত দূরত্বে কাঠি পুঁতে রোপণের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর কাঠিটিকে কেন্দ্র করে এক হাত গভীর ও এক হাত উচ্চতার গর্ত তৈরি করে গর্তে সার ও মাটি মিশিয়ে চারা রোপণের উপযুক্ত করতে হবে। প্রতি গর্তে ৩ থেকে ৭টি করে চারা চার হাত দূরত্বে তিনকোনা আকারে রোপণ করতে হয়। একরে প্রায় ১৩৫০ থেকে ১৫০০ টি চারার প্রয়োজন হয়।
রোপণ সময় বছরের যে কোন সময় পেঁপে রোপণ করা যায়। সেচের সুবিধা থাকলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর অথবা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে রোপণ করা যায় অথবা মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হলে মে মাসে রোপণ করা ভাল। তবে মার্চের প্রথম সপ্তাহে পেঁপের চারা লাগাতে হয়। ৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সের চারা লাগানো ভাল।
আন্তঃপরিচর্যা
আন্তঃপরিচর্যা পেঁপে বাগান আগাছামুক্ত রাখতে হবে। শুকনো মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর সেচ দিতে হয়। মাটি মাঝে মাঝে হালকা কুপিয়ে দেয়া ভাল। রোপণের ৪ থেকে ৫ মাস পর থেকেই ফুল আসা শুরু করে। ফুল দেখে কোনটি স্ত্রী গাছ কোনটি পুরুষ গাছ চেনা যায়। গোল ফুল মেয়ে গাছ ও লম্বা ঝোপা ফুল হবে পুরুষ গাছ। এ সময় প্রতি গর্তে একটি করে স্ত্রী গাছ রেখে আর সব গাছ সে স্ত্রী হোক বা পুরুষ হোক তুলে ফেলতে হবে। তবে প্রতি ২০টি গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখতে হয় যাতে পরাগায়ণে সুবিধা হয়। শতকরা ৫টি পুরুষ গাছ জমিতে রাখতে হয়। একরে ৭৫টি পুরুষ গাছ রাখা প্রয়োজন।
সেচ ব্যবস্হা ১. সেচ নালায় দিতে হবে। ২. যাতে কোন ভাবেই গাছের গোড়ায় সেচ না যায়। গাছ থেকে ৬ ইঞ্চি দূরত্বে পানি সেচ দিতে হবে। ৩. বর্ষার সময় নালা থেকে পানি বের করে দিতে হবে।