হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন : মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘ আলা কুল্লুকুম রায়েন ওয়া কল্লুকুম মাস্উলুন আন রায়িআতিহী, ফাল ইমামুল্লাজি আলান্ নাসে রায়েন ওয়া হুয়া মাস্উলুন আন রায়িআতিহী, ওর্য়া রাজুলু রায়েন আলা আহলি বাইতিহী ওয়া হুয়া মাস্উলুন আন রায়িআতিহী, ওয়াল র্মায়াতু রাইয়াআতুন আলা আহলি বাইতি ঝাওজিহা ওয় ওয়ালাদিহী ওয়া হিয়া মাস্উলাতুন আনহুম। -শুনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা প্রহরী। আর প্রত্যেককেই তার অধিনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ইমাম বা নেতা যিনি শাসন করেন সাধারণ মানুষকে তাকেও তার অধিনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। একজন পুরুষ তার বাড়ির লোকদের রাখাল বা প্রহরী। তাকে তার অধিনস্ত লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘরের লোকদের এবং সন্তানদের রাখাল বা প্রহরী। তাকে তার অধিনস্ত লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। (বোখারী, কিতাবুল আহকাম) হাদিসের রাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) আট বছর বয়সে তাঁর পিতার সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। খন্দকের যুদ্ধ সহ পরবর্তী প্রত্যেকটি যুদ্ধে তিনি শরীক হন। তিনি ছিলেন সুন্নাতে রসুলের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী । পার্থিবতার প্রতি তাঁর কোন আকর্ষণ ছিল না। পদের প্রতিও তাঁর কোন লোভ ছিল না। তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ১৬৩০ টি। তিনি অনেক সাহাবীদের থেকেও হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে রেওয়ায়েত করেছেন তাবেয়ীগণ। পুত্র সালিম (রঃ) ও গোলাম নাফি (রঃ)তাঁর থেকে বেশি রেওয়ায়েত করেছেন। ৭৩ হিজরীতে ৮৫বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। রসুলে করীম (সঃ)-এর ওফাতের পর তিনি ষাট বছর জীবিত ছিলেন। আলোচ্য হাদিস খানাতে মানব জীবনের সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদের দায়িত্বানুভূতি সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। পরিবার ও সমাজ জীবনে নারীদের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। নারী জাতিকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির প্রবাহকে সচল রাখতে ও সন্তান সন্ততির লালন -পালনের প্রয়োজনে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকৃতি প্রদত্ত দায়িত্ব হলো, এই কর্তব্যকে সে সর্বদা সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য চেষ্টা করবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জাতীয় উন্নতির মূল প্রতিটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার উপর নির্ভরশীল। মানব শিশু মাতার পরিচর্যার মাধ্যমে প্রথম জীবনে উন্নত মন ও চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকে। সন্তানের উপর মায়ের প্রভাব বেশি। স্বামীর পরিবার ও সন্তান সন্ততির সার্বিক দায়িত্ব মায়ের উপরে বর্তায়। তাকেই এ ব্যাপারে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। আর তাকে এ ব্যাপারে সহায়তা প্রদান স্বামীর দায়িত্ব। নারী জাতিকে যে প্রয়োজনে সৃষ্টি করা হয়েছে সে দায়িত্ব পালনে অংশ গ্রহণ করা পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই নারী জাতির দায়িত্বকে খাট করে দেখার অবকাশ নেই। স্বামী স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায় সংসার ও সমাজ জীবন সুন্দর ভাবে গড়ে ওঠে। কোরআন মজীদ বিশ্ব মানবতাকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, জীবনের সব রকম তৎপরতা ও উত্থান পতনের ক্ষেত্রে সর্বদাই নারী ও পুরুষ পরস্পরকে সহযোগিতা করছে। ঊভয়ে মিলে জীবনের কঠিন ভার বহন করছে এবং ঊভয়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সভ্যতা ও তমদ্দুনের ক্রমবিকাশ ঘটছে। আল্লাহর ঘোষণাঃ আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু । তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় . মন্দ কাজ করতে নিষেধ করে। ( আত্ তওবা- ৭১) নবী (সঃ) বলেছেনঃ নারীরা পুরুষের অর্ধাংশ- (আবু দাউদ, তিরমিযী) নারী পুরুষ প্রত্যেকেই সমপরিমানে পরস্পরের মুখাপেক্ষী । এতে লাঞ্ছনা ও অপমানের কিংবা মর্যাদা ও গৌরবের কোন প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ বলেনঃ “হুন্না লেবাসুল্ লাকুম ওয়া আন্তুম লেবাসুঁল্লাহুন্না- তারা তোমাদের পোশাক আর তোমরা তাদের পোশাক।” তাই স্ত্রীদের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করার দায়িত্ব স্বামীর উপরে বর্তায়। তাদের কোন দুর্বলতাকে (যদি থাকে) মানুষের সামনে প্রকাশ না করা স্বামীর মহৎ গুণ। একই ভাবে উত্তম স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর ইজ্জৎ সমাজে কী ভাবে বৃদ্ধি পাবে তার দিকে নজর রাখা। কোরআনের এ আয়াতের ঘোষণা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নবী (সঃ)-এর ঘোষণায়। গোটা বিশ্ব যখন নারীকে অপরাধের উৎস এবং সাক্ষাত পাপ ও গোণাহের কারণ মনে করে বসে ছিল তখন বিশ্ব জাহানের সর্ব কালের অতি পবিত্র ব্যক্তি পাপ ও অশ্লীলতায় ভরা চিন্তার মূলে পরিবর্তন আনতে ঘোষণা দিলেন, “দুনিয়ার বস্তু নিচয়ের মধ্যে আমি ভালবাসি নারী, এবং সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতলকারী হল নামায। (নাসায়ী- অনুচ্ছেদ- হুব্বুন নিসা)