পবিত্র কুরআন ও হাদিসে মাতা পিতার প্রতি সন্তানের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল: পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সন্তানদের প্রতি নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘তোমাদের পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করবে। তাদের একজন বা উভয়জন বার্ধক্যে পৌঁছলে, তাদের প্রতি তাদের উদ্দেশ্যে উহ্ শব্দটি পর্যন্ত করবে না। তাদের ধমক দেবে না বরং কথা বলবে শ্রদ্ধা এবং আদবের সঙ্গে, বিনয়-নম্র ও ভালোবাসায় বাহু প্রসারিত করে তাদের (মাতা-পিতা) প্রতি আর বল, হে প্রভু তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছেন’ (সূরা বনিইস্রাইল : ২৩-২৪)। ওই আয়াতে আল্লাহপাক ‘জানাহাযযুল্লি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ ভালোবাসায় নম্রতায় বাহু সম্প্রসারিত করা। মূলত: এটি একটি আরবি বাগধারা যার অর্থ বিনম্র আচরণ করা, বিনয়ী হওয়া। প্রেম ও ভালোবাসায় আবেগ-আপ্লুত হয়ে প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করার জন্য দু’বাহু সম্প্রসারিত করা। ‘আমি তো মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং মাতা-পিতার প্রতিও’ [সূরা লোকমান : ১৪]। মাতা-পিতার আনুগত্য মহান আল্লাহর ইবাদতের পর যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তা ওই আয়াতে প্রমাণিত হয়ে গেল। আরও প্রমাণিত হল যে, আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ওয়াজিব (আরও দেখুন, সূরা আনকাবুত : ৮, বাকারা : ৮৩, নিছা : ৩৬, আনআম : ১৫১, মারইয়াম : ১৪, ৩২ ইত্যাদি)। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করা’। লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘এরপর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা’। হজরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি প্রিয় নবী (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার কাছ থেকে সদাচরণ পাওয়ার অধিক হকদার কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। তারপর কে? তিনি বললেন ‘তোমার মা’। তারপর কে? তিনি বললেন ‘তোমার মা’। অতঃপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’ (বুখারি, মুসলিম)। আল্লাহর ইবাদতের পর পার্থিব কাজগুলোর মধ্যে প্রিয় নবীজী (সা.) সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করাকে। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘সে লাঞ্ছিত হোক, লাঞ্ছিত হোক, লাঞ্ছিত হোক’। বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.) কে সে ব্যক্তি’? উত্তরে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতা উভয়জনকে অথবা একজনকে বৃদ্ধ বয়সে পেল, অথচ সে বেহেশতে প্রবেশ করল না (অর্থাৎ তাদের প্রতি সদাচরণের মাধ্যমে বেহেশতের পথ সুগম করল না)’ [মুসলিম]। প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে, আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে’ (তিরমিযি)। ‘পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য কী’? প্রশ্ন করা হলে প্রিয় নবীজী (সা.) বললেন, ‘তারাই তোমাদের জান্নাত ও জাহান্নাম’ (ইবনে মাজা)। হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাতা-পিতার অনুগত হয়ে রাতকে সকাল করল তার জন্য জান্নাতের দুইটি দরজা খোলা রইল। আর যে ব্যক্তি মাতা-পিতার অবাধ্য হয়ে রাতকে সকাল করল (অর্থাৎ জীবন অতিবাহিত করল) তার জন্য জাহান্নামের দুটি দরজা খোলা রইল’। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, সন্তানদের উচিত পিতামাতার সেবা করা