আস্ক প্রশ্নে আপনাকে স্বাগতম ! এটি একটি প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক কমিউনিটি। এই সাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন ...
221 বার প্রদর্শিত
"ধর্ম ও বিশ্বাস" বিভাগে করেছেন অজ্ঞাতকুলশীল
মানুষকে সামান্য পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তা হচ্ছে নারী-পুরুষের মনী বা বীর্য। এই পানি কি অপবিত্র? তাই যদি হয় তাহলে মানুষও তো অপবিত্র। কারণ মানুষ সৃষ্টির মেইন উপাদনও তো এই বীর্য

1 উত্তর

0 পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন (8,268 পয়েন্ট) 93 546 689

আদম ও হাওয়া (আ) এর বংশধর প্রত্যেক মানুষকেই মনী তথা বীর্য হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটিই সত্য কথা। আল-কুরআন আমাদেরকে এই সংবাদ দিয়েছে। পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমেও তা প্রমাণিত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
( أَلَمْ نَخْلُقْكُمْ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ )
• “আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করি নি? (মুরসালাতঃ ২০)

আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
( فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِق)
• “অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে”। (সূরা তারিকঃ ৫-৬)

সুতরাং উপরোক্ত আয়াত দ্বয়ে যেই পানির কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নির্গত মনী বা বীর্য। এটি পবিত্র না অপবিত্র, আলেমদের থেকে এ ব্যাপরে দু’টি মত পাওয়া যায়। সঠিক কথা হচ্ছে এটি পবিত্র। এই পানি পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। 

১) সহীহ মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ
# “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাপড় হতে হাত দিয়ে ঘষে মনী (বীর্যী) পরিস্কার করতাম। তিনি সেই কাপড় পরে নামায আদায় করতেন”। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ৫৭৫ ইফা) 

এটি জানা কথা যে ঘষাঘষি করে মনী পরিস্কার করলে তা সম্পূর্ণরুপে পরিস্কার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাতে দাগ থেকে যাবে। আর তা সহ নামায পড়া প্রমাণ করে যে মনী অপবিত্র নয়।

২) এই পানি দিয়েই নবী, রাসূল অলী-আওলীয়া ও আল্লাহর সৎ বান্দাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সমস্ত প্রিয় বান্দাদেরকে আল্লাহ্ তাআলা অপবিত্র উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করবেন, তা হতেই পারে না। (দেখুনঃ আশ্ শরহুল মুমতিউ, (১/৩৮৮)

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ কাপড়ে মনী লাগলে কি তা নাপাক হয়ে যায়? (মনী কি নাপাক?)
উত্তরে তারা বলেনঃ মনী পবিত্র। তা অপবিত্র হওয়ার কোন দলীল আমাদের জনা নেই। (দেখুনঃ ফতোয়া নং- ৬/৪১৬)

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে মনী পবিত্র। এটিই ইমাম শাফেঈ এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্মালের প্রসিদ্ধ মত। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেনঃ তা অপবিত্র। তবে ঘষাঘষির মাধমে তা দূর করাই যথেষ্ট। ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ ধৌত করা আবশ্যক। এ সমস্ত মতের মধ্যে প্রথমটিই সঠিক।

আমাদের জানা উচিৎ যে, সকল পদার্থই দেহের ভিতরে থাকা অবস্থায় দেহ পবিত্র থাকে। সেই পদার্থই আবার যখন দেহের বাহিরে আসে, তখন কিছু পদার্থ নাপাক হয় আবার কিছু পদার্থ নাপাক হয় না। যেমন প্রস্রাব, পায়খানা, রক্ত, মজি ইত্যাদি দেহের ভিতরে থাকা অবস্থায় পাক থাকে, কিন্তু যখনই দেহের বাহিরে আসে, তখন-ই নাপাক হয়ে যায়। এতে অজু ভঙ্গ হয় এবং কাপড়ে লাগলে কাপড়ও নাপাক হয়ে যায়। অপরপক্ষে দেহ থেকে যখন বায়ু নির্গত হয়, তখন দেহ এবং কাপড় নাপাক হয় না ঠিকই কিন্তু অজু ভঙ্গ হয়। আবার দেহ থেকে যখন বীর্য বের হয়, তখন অজু ভঙ্গ হয়, দেহ অপবিত্র হয়, এবং কাপড়ও নাপাক হয়। এখানে কথা থাকে যে, আয়েশা (রা:) যে সকল যায়গায় কাপড়কে রক্ত বা বীর্য থেকে ঘষে বা নখ দিয়ে খুঁটিয়ে পরিষ্কার করেছেন, সেই সকল ক্ষেত্রেই কিন্তু উল্লিখিত পদার্থ-দ্বয় শুকনা থাকার কথা উল্লেখ আছে। কাজেই ভেজা থাকলে অবশ্যই ধোলাই করা ছাড়া পবিত্রতা সম্ভব নয়। তবে পায়খানা-প্রস্রাব শুকনা অথবা ভেজা সকল ক্ষেত্রেই ধোলাই করতে হবে।

সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত যে, বীর্য দেহের ভিতরে থাকা অবস্থায় নাপাক থাকে না। পৃথিবীর কোন গবেষণাগারে এপর্যন্ত বীর্যকে বাহির করে অর্থাৎ বাতাস বা দুনিয়ার সংস্পর্শে এনে তা দিয়ে প্রাণের আবির্ভাব ঘটানো সম্ভব হয়নি। স্বামী স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমেই পুরুষ দেহের অভ্যন্তরে থেকে নারী দেহের অভ্যন্তরে তথা জরায়ুতে বীর্য চলে যায়, এবং তার পর থেকে যথা নিয়মে মহান আল্লহ রব্বুল আলামীনের আদেশে দৈনন্দিন পরিবর্তন হতে থাকে। যেখানে বীর্য দুনিয়ার কোন সংস্পর্শেই আসলো না, সেখানে বীর্য নাপাক হল কিভাবে? আল্লাহ রব্বুল আলামীন এই বীর্য পরিবর্তনের পদ্ধতিকে আবার স্বাভাবিক পদ্ধতি বলেননি, বরং বলেছেন যে, “আমি সজোরে নিক্ষিপ্ত পদার্থ থকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি”। কাজেই বাহির থেকে পানি ঢালার মতন করে ঢেলে কখনও মানব দেহের সৃষ্টি সম্ভব নয়’ যদিও তা জরায়ুতেই করা হয়। বীর্য বাহিরে আসার পর শুকিয়ে গেলে তা আর নাপাক থাকে না, এ বিষয় আমরা আয়েশা (রা:) এর বর্ণিত হাদিস থেকেই জানতে পারি। তবে যেহেতু সকল নাপাক পদার্থই দেহের ভিতরে থাকলে পাক থাকে, তাই মহান মহান আল্লহ রব্বুল আলামীন আমাদের দেহকে পাক বীর্য থেকেই সৃষ্টি করেছেন। অথচ আমরা না জেনে সেই পাক অবস্থাকে নাপাক পদার্থ হিসাবে চালিয়ে দিচ্ছি। আমরা কখনই নাপাক পদার্থ থেকে সৃষ্টি নই। আরও একটি উদাহরণ দেয়া যায়, তাহলো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

• তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়। (সূরা আন নাহল : 66) 

এক্ষেত্রে গোবর এবং রক্ত এই দুইটিই বাহিরের জগতে আমাদের জন্য হারাম, অথচ বাহিরের জগতের এই দুই নাপাক পদার্থই মহান আল্লহ রব্বুল আলামীন দেহের ভিতর তথা পাক থাকা অবস্থায় দুগ্ধের রূপ দিয়ে আমাদের জন্য সর্বোত্তম খাদ্য হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমাদের দেশের অনেকের মুখেই শুনা যায় মানুষকে এক ফোটা নাপাক পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি বানোয়াট ও দলীল বিহীন কথা। সুতরাং এ ধরণের কথা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন ।

আ ক ম আজাদ আস্ক প্রশ্ন ডটকমের সাথে আছেন সমন্বয়ক হিসাবে। বর্তমানে তিনি একজন শিক্ষক। আস্ক প্রশ্ন ডটকমকে বাছাই করে নিয়েছেন জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হিসাবে। ভবিষ্যতে একজন বক্তা ও লেখক হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই আশা পূর্ণতা পেতে সকলের নিকট দু'আপার্থী।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
20 জুলাই 2018 "যৌন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন অজ্ঞাতকুলশীল
1 উত্তর
05 এপ্রিল 2018 "ইসলাম ধর্ম" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন শামীম মাহমুদ (7,799 পয়েন্ট) 1009 2971 3067
1 উত্তর
02 মে 2018 "সাধারণ জ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md.Rasel Ahmed (6,181 পয়েন্ট) 495 2298 2406

28,156 টি প্রশ্ন

29,682 টি উত্তর

3,147 টি মন্তব্য

3,920 জন সদস্য



আস্ক প্রশ্ন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে কমিউনিটির এই প্ল্যাটফর্মের সদস্যের মাধ্যমে আপনার প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান পেতে পারেন এবং আপনি অন্য জনের প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন। মূলত এটি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য একটি প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক কমিউনিটি। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।

  1. Jahidul ISLAM

    50 পয়েন্ট

    0 উত্তর

    0 প্রশ্ন

  2. ratna

    50 পয়েন্ট

    0 উত্তর

    0 প্রশ্ন

  3. আবু উবাইদাহ

    50 পয়েন্ট

    0 উত্তর

    0 প্রশ্ন

  4. Apon

    50 পয়েন্ট

    0 উত্তর

    0 প্রশ্ন

  5. সালেহ

    50 পয়েন্ট

    0 উত্তর

    0 প্রশ্ন

শীর্ষ বিশেষ সদস্য

...