চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু এই সম্পদের মান বা মূল্য নির্ধারণের কোনো মূল্যায়নসূচক নেই। মূল্য দিয়ে চরিত্রকে মূল্যায়ন করা যায় না বলেই এটিকে অমূল্য সম্পদ বলা হয়। মানুষের সার্বিক জীবনব্যবস্থায় এই অমূল্য সম্পদের কার্যকারিতা অনেক শক্তিশালী। তাই মানবজীবনে চরিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী বিষয়। ঈমানের পরে চরিত্রকেই ইসলামে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যার চরিত্র দুর্বল, সে খাঁটি ঈমানদার নয়, প্রকৃত বিশ্বাসী নয়।
.
চরিত্র মহামূল্যবান, অতুলনীয় সম্পদ ও এক অমূল্য রত্ন। ব্যক্তির নৈতিকতা ও চরিত্রকে সুন্দর ও মার্জিত করার বিষয়টি ইসলামে কত যে গুরুত্বপূর্ণ মানবতার মহান শিক্ষক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর নিম্নোক্ত হাদিস থেকে অনুমান করা যায়। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন- তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম মানুষ বলে বিবেচিত, যাদের চরিত্র উত্তম। অপর এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হবে, যার নৈতিকতা ও চরিত্র সবচেয়ে ভালো। (বোখারি)
.
মানুষ যে সমাজ ও পরিবেশে বসবাস করে সে সমাজ ও পরিবেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষতা নিশ্চিত করে। সমাজ ও পরিবেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি যদি উত্তম হয় তাহলে মানুষের চরিত্রও উত্তম হয়। তবে জীবনকে সফলতার প্রান্তে উপনীত করার জন্য শুধুমাত্র চারিত্রিক উৎকর্ষতাই যথেষ্ট নয় বরং চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রয়োজন। সমাজের বহু মানুষ আছে যারা মাঝে মধ্যে স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য চরিত্রহীন হয়ে পশুত্বে পরিণত হয়। চরিত্রের বৈশিষ্ট্য পশুত্বে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হলে চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রয়োজন।
.
চরিত্রের ক্ষেত্রে একটি মূল্যবান কথা তাই সমাজে বহুল প্রচারিত হয়েছে যে, চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। পৃথিবীর বাকি সকল সম্পদ হারিয়ে গেলেও ফিরে পাওয়া সম্ভব কিন্তু চারিত্রিক সম্পদ নষ্ট কিংবা হারিয়ে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। সমাজে বহুল প্রচলিত সেই মহামূল্যবান মানবীয় বাণীগুলো হলো ওIf money is lost nothing is lost, if health is lost something is lost, if character is lost everything is lost.অর্থাৎ অর্থ হারালে কিছুই হারায় না, স্বাস্থ্য হারালে কিছু হারায়, কিন্তু একবার চরিত্র হারালে সবকিছুই হারায়।
.
মানবজীবনে সফলতার জন্য চারিত্রিক দৃঢ়তা অনেক গুরুত্বপুর্ণ। চলনে-বলনে, আচার-অনুষ্ঠানে, কথা-কাজে, নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠাই ব্যক্তি জীবনের সফলতা নিশ্চিত করে। যার চারিত্রিক দৃঢ়তা যতো বেশি তার সফলতাও ততো বেশি। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) মুমিনের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চাইতে বেশি ভারী আর কোনো জিনিস হবে না। (আবু দাউদ) আর চারিত্রিক দৃঢ়তা মানুষের কাছ থেকেই কামনা করা হয়। কারণ মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব।
.
আল্লাহ তার সকল মাখলুকের মধ্যে মানুষকেই দিয়েছেন চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা। আর বাকি সকল সৃষ্টিকে করেছেন মানুষের অধীন। মানুষের সাথে বাকি মাখলুকের পার্থক্য এখানেই। মানুষ আর পশুর পার্থক্য নির্ণয় হয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে। মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তা যদি সকল হীনতা, নীচতা, পশুত্ব ও নোংরামির ঊর্ধ্বে থাকে তবেই সে পশুর চাইতে শ্রেষ্ঠ, তবেই সে সফল। কষ্ট ছাড়া, ঘাম, শ্রম ও ধৈর্যের বিনিময়ে অর্জিত অনেক দিনের মানমর্যাদা সামান্য চরিত্রহীনতায় মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে। মানুষকে কর্ম ও চিন্তার স্বাধীনতা যেমনি দেয়া হয়েছে তেমনি তার সীমাও আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যে কোন পরিবেশই তৈরি হোক না কেন সেই সীমা অতিক্রম না করাই চারিত্রিক দৃঢ়তা, নিজেকে সেই সীমার মধ্যে আটকে রাখতে পারাই সফলতা।
.
মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব এই আত্মপরিচয় সব সময় স্মরণ থাকলে সেটিই চরিত্রহীনতা থেকে রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করবে। আত্মসম্মানবোধ যেমন সম্মানহানি থেকে চরিত্রকে রক্ষা করে তেমনি আত্মসংযম লোভ-লালসায় ডুবে গিয়ে চরিত্রহীনতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া থেকে ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখে। চরিত্র মানবজীবনের সৌন্দর্য আর চারিত্রিক দৃঢ়তা এই সৌন্দর্যকে কলুষমুক্ত রেখে সুষমায় প্রস্ফুটিত করে সাফল্য নিশ্চিত করে। মানবজীবনের প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি পদক্ষেপেই এই সুষমা প্রয়োজন, না হলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে অর্জিত সাফল্য।
.
চরিত্রই পারে মানুষের সকল সাফল্যকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে। তাই এই পৃথিবীর আর কোন কিছুর সঙ্গেই চরিত্রের তুলনা হয় না। চরিত্রকে অর্থের বিনিময়ে কেনা যায় না, এমনকি সমগ্র বিশ্বের বিনিময়েও তা কেনা অসম্ভব। অর্থের ক্রয়ক্ষমতা নির্দিষ্ট বিষয়ে সীমাবদ্ধ। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা মূল্যমান নির্ধারণ করে অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করা যায় না। অনেক সময় অর্থ বিশেষ বিষয়ে সীমা অতিক্রম করতে পারে না।
.