নফল রোজা দুই প্রকার; প্রথম প্রকার হলো নির্ধারিত বা নবী করিম (সা.) কর্তৃক পালনকৃত, এই প্রকার রোজা সুন্নত; দ্বিতীয় প্রকার হলো অনির্ধারিত, এগুলো মুস্তাহাব। এই উভয় প্রকার রোজাকে সাধারণভাবে নফল রোজা বলা হয়ে থাকে
নফল রোজা পালন অবস্থায় যদি অতিথি আপ্যায়ন করাতে হয় বা আপ্যায়ন গ্রহণ করতে হয়, তাহলে নফল রোজা ছেড়ে দেওয়া জায়েজ হবে এবং পরবর্তী সময়ে এই রোজা কাজা আদায় করা ওয়াজিব হবে। এতে তিন গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। প্রথমত, নফল রোজা রাখার সওয়াব; দ্বিতীয়ত, মেহমান (গেস্ট) বা মেজবান (হোস্ট)-এর সম্মান রক্ষার সওয়াব; তৃতীয়ত, নফল রোজা ভাঙার পরিবর্তে ওয়াজিব কাজা রোজা আদায় করার সওয়াব।
হজরত উম্মে হানি (রা.) বর্ণনা করেন, মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমা (রা.) এলেন, তিনি নবীজি (সা.)-এর বাঁ পাশে বসলেন এবং উম্মে হানি (রা.) নবীজি (সা.)-এর ডান পাশে বসলেন। এমতাবস্থায় ওয়ালিদাহ একটি পানপাত্র নিয়ে এল। নবীজি (সা.) তা থেকে পান করলেন, তারপর উম্মে হানি (রা.) পান করলেন। এরপর উম্মে হানি (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি রোজা ছিলাম এখন ইফতার (ভঙ্গ) করলাম। নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি কাজা রোজা করছিলে? উম্মে হানি (রা.) বললেন, না। তিনি বললেন, যদি তুমি নফল রোজা রাখো তবে তা ভাঙায় কোনো দোষ নেই। (আবু দাউদ, তিরমিজি ও দারমি)।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি ও হাফসা রোজা ছিলাম; আমাদের সামনে খাবার পেশ করা হলো, আমাদেরও খেতে ইচ্ছে হলো; আমরা আহার করলাম। হাফসা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমরা রোজা ছিলাম, আমাদের সামনে খানা পেশ করা হলো, আমাদেরও খাওয়ার আগ্রহ ছিল; তাই আমরা খেলাম। নবীজি (সা.) বললেন, তোমরা এই রোজা অন্য দিন কাজা করে নেবে। (তিরমিজি)
রোজা রাখার নিষিদ্ধ দিবসসমূহ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির ঈদের দিন ও রোজার ঈদের দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)। হজরত নুবায়শা হুজালি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আইয়ামে তাশরিক (জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ) হলো খাওয়া, পান করা ও আল্লাহর স্মরণ করার জন্য।’ (মুসলিম)। জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফাতে অবস্থানকারীরা রোজা রাখবেন না; অন্যরা রোজা রাখতে পারবেন।
বছরে পাঁচ দিন রোজা রাখা নিষেধ তথা নাজায়েজ ও হারাম। যথা: রোজার ঈদের দিন, কোরবানির ঈদের দিন ও তৎপরবর্তী তিন দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা এ দিবসগুলোতে রোজা রাখবে না। কারণ, এই দিনগুলো শুধুই পান, আহার ও খেল-তামাশার (আনন্দ-ফুর্তি উপভোগের) জন্য।
সতর্কতা
নফল রোজা রেখে ইফতার যেন মাগরিবের নামাজের জামাত ছুটে যাওয়ার কারণ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। রমজান মাসে সবাই ফরজ রোজা পালন করেন বিধায়, সবার জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে মাগরিবের নামাজের জামাত কিছুটা বিলম্বে আরম্ভ করা হয়। কিন্তু রমজান ছাড়া অন্য সময় যেহেতু মাগরিবের নামাজের জামাত বিলম্বিত হবে না; তাই মসজিদে পানি দিয়ে ইফতার করে জামাতে শামিল হওয়া বাঞ্ছনীয়।