দেশে বেড়েই চলছে বেকারত্ব। বেকারত্বের সাথে তাল মিলিয়ে না হলেও আশার বানী হচ্ছে যে, নতুন অনেক কর্মসংস্থানেরই সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই বেকার যুবক কিংবা সদ্য পড়াশুনা শেষ করা গ্রাজুয়েটদের চোখ সবসময় চাকুরীর সার্কুলারের দিকেই থাকে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে চাকুরী তো সোনার হরিনের চাইতেও কম কিছু নয়! একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, চাকুরী বিষয়ক ওয়েবসাইট কিংবা চাকুরীর সার্কুলার ভিত্তিক পত্রিকার সংখ্যাও তুলনামূলক বেড়েছে। তবে একটা বিষয় আমরা অনেকেই জানি, যেখানেই বেশি মানুষের আনাগোনা, সেখানেই প্রতারনা! অর্থাৎ, বর্তমান সময়ের চাকুরীর ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে এই ক্ষেত্রেও প্রবেশ করেছে প্রতারক চক্র। এতো সব জব সার্কুলারের মাঝে তাই প্রতারনামূলক চাকুরীর অফার থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। প্রতারকরা মূলত ভুয়া এবং লোভনীয় চাকুরীর সার্কুলার প্রচারের মাধ্যমে চাকুরী প্রার্থীদের কাছে থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাই একজন চাকুরী প্রার্থী হিসেবে আপনাকে চাকুরী খুঁজতে হবে একটু সচেতনভাবে। আর এর জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই যথেস্ট। আজ তুলে ধরছি তেমনই কিছু উপায়, যার মাধ্যমে এড়িয়ে চলতে পারবেন ভুয়া চাকুরীর অফারগুলো।
যেভাবে সনাক্ত করবেন প্রতারনামূলক চাকুরীর অফার
প্রতারনামূলক জবকে এড়িয়ে চলার জন্য প্রথমত আপনাকে সে ধরনের জব সার্কুলার চিনতে শিখতে হবে। আসুন জেনে নিই এধরনের ভুয়া চাকুরীর সার্কুলারের লক্ষনগুলোঃ
-
আকর্ষণীয় বেতন এবং লোভনীয় সুযোগ সুবিধাঃ ভুয়া চাকুরীর সার্কুলার গুলোতে মূলত আকৃষ্ট করতেই অতিরিক্ত মাত্রায় লোভনীয় সুযোগ সুবিধার উল্লেখ থাকে। সাথে থাকে আকর্ষণীয় বেতনের অফার।
-
ব্যক্তিগতভাবে জব অফারঃ প্রায়ই এরকম মেইল কিংবা অন্য মাধ্যমে কিছু চাকুরীর অফার পাবেন। যেটার সারমর্ম হল, তাঁরা আপনার সিভি/রিজিউমি অনলাইনে বা অন্য কোন সোর্সে পেয়েছে। তাঁরা আপনাকে চাকুরী দিতে চায়। এ ধরনের অফারগুলোর ৯৯ শতাংশই ভুয়া। প্রথমেই বিশ্বাস করে বসবেন না এমন অফার। ভালভাবে ভেরিফাই করে নিবেন। সাধারণত এভাবে খুব কম লোকই জব অফার পেয়ে থাকে। অর্থাৎ যাদেরকে এভাবে কোন কোম্পানী অফার করে থাকে সেসব লোক অনেক প্রতিষ্ঠিত এবং সফল। সেকারণেই তাদেরকে অনেক প্রতিষ্ঠান জব অফার করে থাকেন। কিন্ত আপনি যদি হয়ে থাকেন একদম নতুন চাকুরী প্রার্থী। আর চাকুরীর এরকম অফার পেয়ে থাকেন। তাহলে মোটামুটি শতভাগ নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সেই চাকুরীর অফার ভুয়া।
-
আবেদনে অর্থ লেনদেনের শর্তঃ কোন চাকুরীতে আবেদনের শর্তই যদি থাকে অর্থের লেনদেন। তাহলে নিশ্চিত থাকুন, উক্ত চাকুরী পুরোপুরি ভুয়া। অর্থ আত্মসাতই তাদের মূল উদ্দেশ্য। কারন কর্মী নিয়োগে ইচ্ছুক কোন প্রতিষ্ঠানই আবেদনে অর্থের লেনদেন শর্ত হিসেবে রাখেনা।
-
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়াঃ কোন প্রতিষ্ঠান যদি চাকুরীর আবেদনের সময়েই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য চায়। তবে বুঝে নিতে হবে চাকুরীর অফারটি ভুয়া। আপনার বেতন পাঠাতে ব্যাংক একাউন্টের তথ্য প্রয়োজন বলেই বেশীরভাগ সময় প্রতারক চক্র দাবী করে থাকে। কিন্ত চাকুরীর নিয়োগ পাওয়ার আগেই এ ধরনের তথ্য চাওয়া মানেই প্রতারনা স্পষ্ট।
-
বিভ্রান্তিকর/সন্দেহজনক চাকুরীর বিবরনঃ ভুয়া চাকুরীর সার্কুলার ভালভাবে পড়লেই বুঝবেন তাদের অফার করা চাকুরীর বিবরন স্পষ্ট নয়। প্রতিটি ভ্যালিড চাকুরীর অফারে চাকুরী সংক্রান্ত প্রতিটি তথ্য অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা। কিন্তু ভুয়া জব সার্কুলারে স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট বিবরন পাওয়া যায়না।
-
আনপ্রফেশনাল সার্কুলারঃ একটি প্রতিষ্ঠান যখন কর্মী নিয়োগের জন্য সার্কুলার প্রকাশ করে তাতে প্রফেশনাল কিছু ব্যাপার থাকে। যেমনঃ তাদের হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট নিয়োগের বিষয়াদি নিয়ন্ত্রন করে, সার্কুলার প্রকাশ করা হয় বিশ্বাসযোগ্য জব পোর্টালে কিংবা স্বীকৃত পত্র-পত্রিকায়। কিন্ত এগুলোর কোনটাই খুঁজে পাবেন না ভুয়া জব সার্কুলারে। ভুয়া চাকুরীর অফার লেটারে অনেক সময় খেয়াল করবেন, যোগাযোগের ই-মেইল এড্রেস হিসেবে কারো ব্যক্তিগত ই-মেইল এড্রেস দেয়া আছে কিংবা সার্কুলার গুলো কোন বেনামী ওয়েব পোর্টালে প্রকাশিত। এ ধরনের জব সার্কুলারে কোনভাবে বিশ্বাস রাখবেন না।
যেভাবে এড়িয়ে চলবেন ভুয়া চাকুরী
-
সার্কুলার প্রকাশ মাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাঃ প্রথমেই আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে চাকুরীর সার্কুলার যেখানে প্রকাশিত হয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য কিনা। জনপ্রিয় কিংবা বিশ্বাসযোগ্য নয় এমন কোন মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া চাকুরীর সার্কুলার পুরোপুরি এড়িয়ে চলবেন। সবসময় চেস্টা করবেন দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত জব পোর্টালগুলোর মাধ্যমে চাকুরী খুঁজতে। এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে।
-
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে জানুনঃ না জেনে শুনে যে কোন চাকুরীতে আবেদনের অভ্যাস আজ থেকেই বাদ দিন। এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। প্রতিটি চাকুরীতে আবেদনের পূর্বে নিয়োগদানে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিন। বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেই কেবল আবেদনের দিকে পা বাড়ান। প্রতিষ্ঠিত কোন কোম্পানীর সার্কুলার হলে তো কোন কথাই নেই। কিন্ত অচেনা প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদনের পূর্বে যতটুকু সম্ভব উক্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে চিনতে জানতে চেস্টা করুন। বিশ্বস্ত মনে না হলে তখনই এড়িয়ে যান সেই সার্কুলার।
-
পত্র পত্রিকায় চোখ রাখুনঃ চাকুরীর বাজারে প্রতিনিয়ত ঘটছে হাজারো প্রতারনা। তাই আপনিও প্রতারিত হতে না চাইলে চোখ রাখতে হবে সংবাদমাধ্যমে। মানুষ কিভাবে প্রতারিত হচ্ছে, প্রতারকরা নতুন কি কৌশল নিচ্ছে। সেসব সম্পর্কে সবসময় অবহিত থাকতে হবে। কারন প্রতারকরা আপনার চাইতেও বেশী স্মার্ট। তাই তাদের প্রতারনার রাস্তাও সময়ের সাথে বদলে যায়। আর আমরা সচেতন থাকার পরও খুব সহজে তাদের প্রতারনার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি।