(বাস্তব কিংবা কল্পিত) প্রাণীর (ছাঁপানো বা আঁকানো) ছবি ঘরে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা তথা উন্মুক্ত রাখা নাজায়েয। কেননা,
প্রথমত, যে ঘরে প্রাণীর (তোলা বা আঁকা) ছবি থাকে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। হাদীছে আছে -
"হযরত আবু তালহা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "ফেরেশতারা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে...।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫২৫)
"হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহু) হতে বর্ণিত... জিবরাঈল (’আলাইহিস সালাম) বললেন, যে ঘরে ছবি বা কুকুর থাকে, সে ঘরে আমরা (ফেরেশতারা) কখনও প্রবেশ করি না।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩৫)
মন্তব্যঃ এ হাদীছ দু'টিতে ছবির সাথে কুকুরের বর্ণনা থাকায়, অনেকে মনে করেন, ছবি মাত্রই এমন প্রাণীর ছবি যা চতুষ্পদ জন্তুবিশেষ; অথবা মানুষ এমন ছবির আওতাভুক্ত নয়। তবে, আমি মনে করি, এটি একটি ভুল ধারণা বা ব্যাখ্যা মাত্র। এ সম্পর্কে পরবর্তীতে আলোকপাত করছি।
এছাড়াও হাদীছে আরও আছে -
"হযরত আবু তালহা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩৩)
"হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত,... নবীজী (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন, ... আর যে ঘরে ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩২)
দ্বিতীয়ত, (উপরোক্ত হাদীছসমূহ অনুসারে) নামাজের ঘর রহমত হতে বঞ্চিত হওয়ার দরুন, তা বান্দাকে লা'নত দেয় এবং হাশরের ময়দানে বান্দার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। তাই এ থেকে নিরাপদ থাকতে ঘরে প্রাণীর ছবি না রাখাই শ্রেয়।
তৃতীয়ত, নবীজী (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) স্বয়ং ঘরে প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় বা দ্রব্যাদি পছন্দ করতেন না। হাদীছে এসেছে -
"হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না, যাতে কোনো (প্রাণীর) ছবি থাকত। (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫২৮)
"হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক যুদ্ধের সফর থেকে ফিরে এলেন। আমি আমার ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। তাতে ছিল (প্রাণীর) অনেকগুলো ছবি। নবীজী (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন...।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩০ ও ৫৫৩১)
"নবী সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, (একবার) তিনি ছবিযুক্ত গদি কিনলেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বাহির থেকে এসে) যখন তা দেখতে পেলেন, তখন দরজার উপর দাঁড়িয়ে গেলেন। (ভেতরে) প্রবেশ করলেন না। আয়শা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) নবীজীর (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব বুঝতে পারলেন।..." (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩৬)
মন্তব্যঃ আলোচ্য হাদীছসমূহ যদিও আঁকা বা খোদাই করা প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড়ের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণিত; তদুপরি, তা
(ক) প্রাণীর (ক্যামেরায় তোলা) ছবি-ছাপানো কাপড় বা দ্রব্যসামগ্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
(খ) ঘরে উন্মুক্ত রাখা যে কোনো প্রতিকৃতি-মূর্তি, পুতুল ইত্যাদিও এর আওতায় পড়বে।
চতুর্থত, প্রাণীর ছবি ঘরে রাখাকে ফকীহগণ নাজায়েয ও মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন। (যুগ জিজ্ঞাসা, ফতোয়ায়ে রেজভীয়া - ৯ম খন্ড, আহকামে তাসভীর ইত্যাদি)
লক্ষ্য করুন, উপরোক্ত হাদীছসমূহ এবং বর্ণনায় ছবি বলতে এমন কিছুর (তোলা বা আঁকা) ছবিই বোঝানো হয়েছে,
(ক) যার প্রাণ আছে এবং চলাফেরা করে; অর্থাৎ, সকল স্থলজ ও জলজ প্রাণী। যেমন - মানুষ, পশু, পাখি, পোকা-মাকড়, মাছ ইত্যাদি।
(খ) এমন কাল্পনিক চরিত্র বা প্রতিকৃতি যা কথা বলে বা চলা-ফেরা করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যেমনঃ আঁকা মূর্তি-প্রতিমা-ভাস্কর্য বা কাল্পনিক দেব-দেবী এবং (বর্তমান যুগের আলোকে) কার্টুন চরিত্র, পুতুল, টেডিবিয়ার, প্রাণীর আকৃতিবিশিষ্ট রোবট, ভীনগ্রহের প্রাণী ইত্যাদি।
এসব বস্তুর ছবি ঘরে উন্মুক্ত থাকলে, ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারে না।
অর্থাৎ, এমন কিছুর ছবি বোঝানো হয়নি -
(ক) যার প্রাণ আছে কিন্তু চলা-ফেরা করতে পারে না; যেমন - গাছ-পালা।
(খ) যার প্রাণ নেই অর্থাৎ, জড়বস্তু, দ্রব্যসামগ্রী এবং আসবাবপত্র।
(গ) প্রকৃতি (পাহাড়-পর্বত-নদী-সাগর-আকাশ) এবং স্থাপনা (দালান-কোঠা) ইত্যাদি।
এসব বস্তুর (আঁকা বা তোলা) ছবি ঘরে থাকলেও, ঘরে ফেরেশতা প্রবেশে বাধা থাকে না।