এরপর প্রথম আকাবার শপথে অংশগ্রহণকারি সাহাবা আসআদ ইবন যুরারা (রাঃ) ও মুসআব ইবন উমায়ের (রা) এর একান্ত প্রচেষ্টায় সাদ ইবনে মুআয ও উসায়দ ইবন হুযায়র সহ মদিনায় আনসারদের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের কথা তোলে ধরে তাদেরকে ইসলামের পতাকা তলে শামিল করান। এমনকি মদিনার এমন কোন মহল্লা বাকী রাখেননি যেখানে মুসলিম নর নারীর একটা দল গড়ে তোলেননি। এদিকে মক্কায় সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) দের উপর নির্মম নির্যাতন আর বৃদ্দি পেতে লাগল। একপর্যায়ে এমন হল মক্কার কাফেরেরা নবীকরিম (সাঃ) এর উপরও নির্যাতনের করতে লাগল। তখনই নবী করিম (সাঃ) মদিনায় হিজরতের চিন্তা করলেন কিন্তু আল্লাহ্র আদেশের অপেক্ষায় ছিলেন। এর পরবর্তী হজ্জ মওসুমে মুসআব ইবন উমায়ের (রাঃ) সহ ৭৩ জন পুরুষ ২ জন মহিলা সহ মক্কায় আগমন করেন। এরপর হজ্জ উপলক্ষে বের হয়ে আইয়ামে তাশরীকের মাঝামাঝি এক রাতে এই দলটি নবী করিম (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য আকাবায় মিলিত হল। তাদের উপস্থিতির কিছুক্ষণ পর নবী করিম (সাঃ) আব্বাস ইবন আব্দুল মত্তালিব (নবীজির চাচা) সহ আকাবায় উপস্থিত হলেন। যুদিও নবীজির চাচা তখনও ঈমান আনেননি কিন্তু ভ্রাতষ্পুত্রের এ আলোচনায় উপস্থিত থেকে তার নিরাপত্তার ব্যাপারে আনছারদের থেকে অংগীকার গ্রহণ করাকে জরুরি মনে করলেন। তাই সর্ব প্রথম আব্বাস ইবন মত্তালিব বলেনঃ হে খাযরাজ গোত্রের লোকেরা! আমাদের কাছে মোহাম্মদ (সাঃ) এর কি মর্যাদা, তা তোমাদের অজানা নেই। আমরা তাঁকে আমাদের সম্প্রদায়ের হাত থেকে এযাবৎ রক্ষা করে এসেছি। কাজেই তাঁর দেশ ও সম্প্রদায়ের মাঝে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত স্বরক্ষিত। কিন্ত তবু তিনি তোমরাদের কাছে চলে যেতে চান। এখন চিন্তা করে দেখ, তোমরা যদি তাঁকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করতে পার এবং শ্ত্রুর হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করতে সক্ষম হও, তবে তোমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ কর। পক্ষান্তরে যদি মনে কর তোমরা তাঁকে রক্ষা করতে পারবেনা, শত্রুর হাতে ছেরে দিতে বাধ্য হবে তাহলে বরং এখনই ছেড়ে দাও। করন তিনি স্বগোত্র ও স্বদেশে নিরাপদেই আছেন।
তখন মদিনার আনছারা আব্বাস (রাঃ) কে বললেনঃ আমরা আপনার বক্তব্য শুনলাম। ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) এখন আপনি কথা বলুন এবং আপনার নিজের ও আপনার রবের জন্য আমাদের থেকে যে অঙ্গীকার নেওয়া ভাল মনে করেন তা নিতে পারেন। তখন রাসুলল্লাহ (সাঃ) বললেন। আমি এই মর্মে তোমাদের থেকে বায়াত গ্রহণ করতে চাই যে তোমরা তোমাদের নারী ও শিশুদের যেভাবে রক্ষা কর, আমাকেও সে ভাবে রক্ষা করবে। তখন বারা ইবনে মারুর (রাঃ) নবী করিম (সাঃ) এর হাত মোবারক দরে বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ যিনি আপনাকে সত্যসহ নবীরুপে প্রেরন করেছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আমরা তেমনি আপনাকে রক্ষা করব যেভাবে আমারা আমাদের পরিবারবর্গদের করে থাকি। অতএব ইয়া রাসুলল্লাহ (সাঃ) আপনি আমাদের বায়াত গ্রহণ করুন। এই কথার মাঝখানে আবুল হায়সাম ইবন তায়িহান (রাঃ) বলেন যে ইয়া রাসুলল্লাহ (সাঃ) ইয়াহদীদের সাথে আমাদের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে এখন আমরা তা ছিন্ন করতে যাচ্ছি। এমনত হবেনা যে, আমরা এরূপ করার পর আল্লাহ্ যখন আপনাকে বিজায় দান করবেন তখন আপনি আমাদেরকে ছেড়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসবেন। একথা শুনে নবী করিম (সাঃ) মৃধু হেসে বললেনঃ তোমাদের রক্ত আমার রক্ত। তোমাদের জীবন-মরণের একই সুত্রে গ্রথিত থাকবে আমার জীবন-মরণ। আমি তোমাদের আর তোমরাও আমার। তোমারা যাদের সাথে লড়বে আমিও তাদের সাথে লড়াই করব। তোমাদের সাথে যারা শান্তি স্থাপন করবে, আমিও তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করব।
দ্বিতীয় শপথের বিশয়বস্তুসমূহঃ
এই শপথ দুই ভাগে বিভক্ত একভাগ নবীজির কাছে সাহাবীদের শপথ অন্যদিকে দ্বিতীয় ভাগ নবী করিম (সাঃ) কর্তিক ওয়াদা।
ক) কাফেরদের নির্যাতনে বিপরীতে নারী ও শিশুর ন্যয় নবী করিম (সাঃ) কে হেফাজাত করার শপথ।
খ) পক্ষ্যান্তরে ইসলামের বিজয় আসলে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে না আসার নবী (সাঃ) কর্তিক ওয়াদা।