সুস্থ থাকার কিছু উপায় পূর্ববর্তী পরবর্তী প্রিন্ট করুন Share আমাদের মধ্যে কেউই অসুস্থ হতে চায় না। কারণ অসুস্থতা মানেই ঝামেলা এবং খরচের ব্যাপার। অসুস্থ হলে যে শুধু খারাপ লাগে তা-ই নয়, এর ফলে একজন ব্যক্তি কাজে বা স্কুলে যেতে পারেন না, অর্থ উপার্জন করতে পারেন না অথবা নিজ পরিবারের দেখাশোনাও করতে পারেন না। উপরন্তু সেই ব্যক্তির দেখাশোনা করার জন্য আরেকজন লোকের প্রয়োজন হয় এবং তাকে হয়তো দামি দামি ওষুধ কেনার অথবা চিকিৎসা করানোর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। একটা সুপরিচিত প্রবাদ বলে, “বিপদ আসার আগেই সাবধান হওয়া ভালো।” এটা ঠিক যে, কিছু কিছু রোগ এড়ানো যায় না। তবে, সহজেই অসুস্থ না হওয়ার অথবা অসুস্থতা রোধ করার জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন। পাঁচটা বিষয় বিবেচনা করুন, যেগুলো আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। ১ উত্তম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন মেয়ো ক্লিনিকের মতে, “অসুস্থতা এবং রোগ সংক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে ভালো একটা উপায়” হল, হাত ধোয়া। সর্দিকাশি হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, হাতে জীবাণু থাকা অবস্থায় নাক বা চোখ ঘষা। এই ধরনের জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, নিয়মিতভাবে হাত ধোয়া। উত্তম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে বিভিন্ন মারাত্মক রোগের সংক্রমণও এড়ানো যায় যেমন, নিউমোনিয়া এবং ডায়েরিয়া। এই ধরনের রোগের কারণে প্রতি বছর কুড়ি লক্ষেরও বেশি শিশু মারা যায়, যাদের বয়স পাঁচ বছরের নীচে। হাত ধোয়ার মতো সাধারণ অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এমনকী মারাত্মক ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণের হার কমানো যেতে পারে। বিশেষভাবে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে হাত ধোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি নিজেকে ও অন্যদের সুস্থ রাখতে পারেন। মূলত এই সময়গুলোতে হাত ধোয়া উচিত: টয়লেট ব্যবহার করার পরে। বাচ্চাদের ডায়াপার বদলানোর পর অথবা তাদের টয়লেট করানোর পরে। ক্ষতস্থান অথবা কাটা জায়গা পরিষ্কার করে ওষুধ লাগানোর আগে এবং পরে। কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার আগে এবং পরে। খাবার প্রস্তুত করার, তা পরিবেশন করার অথবা খাওয়ার আগে। হাঁচি দেওয়ার, কাশি দেওয়ার এবং নাক ঝাড়ার পরে। কোনো পশুর গায়ে হাত দেওয়ার অথবা তাদের মল-মূত্র পরিষ্কার করার পরে। আবর্জনা পরিষ্কার করার পরে। আর সঠিকভাবে হাত ধোয়ার বিষয়টাকে হালকাভাবে নেবেন না। গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই পরে হাত ধোয় না অথবা ধুলেও, সঠিকভাবে ধোয় না। কীভাবে হাত ধোয়া উচিত? পরিষ্কার জলের নীচে হাত ভেজান এবং সাবান লাগান। দু-হাত ঘষে ফেনা তৈরি করুন ও সেইসঙ্গে অবশ্যই নখ, বৃদ্ধাঙ্গুল, হাতের পিছন দিক এবং আঙুলের মাঝের জায়গা পরিষ্কার করুন। অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ঘষুন। পরিষ্কার জলের নীচে হাত ধোন। কোনো পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছুন। যদিও এই বিষয়গুলো খুবই সাধারণ কিন্তু এগুলো অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করার এবং জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী। ২ বিশুদ্ধ জল ব্যবহার করুন কিছু কিছু দেশে পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা রোজকার বিষয়। কিন্তু, পৃথিবীর যেকোনো জায়গায়ই বিশুদ্ধ জল পাওয়া সেই সময় কঠিন হয়ে উঠতে পারে, যখন বন্যা, ঝড়, পাইপ ভেঙে যাওয়া অথবা অন্যান্য কারণে জলের প্রধান উৎস দূষিত হয়ে পড়ে। জলের উৎস যদি নিরাপদ না হয় এবং জল সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা না হয়, তা হলে এতে রোগজীবাণু জন্মাতে পারে ও সেইসঙ্গে কলেরা, প্রাণনাশক ডায়েরিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ হতে পারে। একটা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর ১৭০ কোটি লোক ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয় আর এর একটা প্রধান কারণ হল, দূষিত জল পান করা। সহজেই অসুস্থ না হওয়ার অথবা অসুস্থতা রোধ করার জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসুস্থ ব্যক্তির মলের দ্বারা দূষিত জল ও খাবার খাওয়ার কারণে কলেরা হয়ে থাকে। এই ধরনের এবং অন্যান্য জল দূষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আপনি কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন, এমনকী তা যদি কোনো দুর্যোগের ঠিক পরেও হয়ে থাকে? লক্ষ রাখুন যাতে পানীয় জল ও সেইসঙ্গে দাঁত ব্রাশ করার, আইস কিউব তৈরি করার, খাবার ও বাসনপত্র ধোয়ার অথবা রান্না করার জল নিরাপদ উৎস থেকে আসে; সেই উৎস হতে পারে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সরবরাহকৃত ভালোভাবে পরিশোধিত জল অথবা নির্ভরযোগ্য কোম্পানির দ্বারা সরবরাহকৃত সিল করা বোতল। কোনোভাবে যদি পাইপের জল দূষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে সেই জল ব্যবহার করার আগে ফুটিয়ে নিন অথবা উপযুক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে জল পরিশোধন করে নিন। বিভিন্ন কেমিক্যাল যেমন, ক্লোরিন অথবা জল পরিশোধক ট্যাবলেট ব্যবহার করার সময় প্রস্তুতকারী সংস্থার নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে তা অনুসরণ করুন। গুণগত মানসম্পন্ন জলের ফিলটার ব্যবহার করুন, যদি তা সহজেই পাওয়া যায় এবং কেনার সামর্থ্য থাকে। এমনকী জল পরিশোধন করার কেমিক্যালও যদি পাওয়া না যায়, তা হলে ঘরে ব্যবহারযোগ্য ব্লিচ ব্যবহার করুন, ১ লিটার জলে দু-ফোঁটা (১ গ্যালন জলে আট ফোঁটা) ব্লিচ ভালোভাবে মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন এবং এরপর ব্যবহার করুন। পরিশোধিত জল সবসময় পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে রাখুন, যাতে তা আবারও দূষিত হয়ে না যায়। লক্ষ রাখুন যাতে জল তোলার পাত্র পরিষ্কার থাকে। পরিষ্কার হাতে জলের পাত্র ব্যবহার করুন এবং জল তোলার সময় হাত ও আঙুল জলের মধ্যে ডোবাবেন না। ৩ খাবারের প্রতি খেয়াল রাখুন পুষ্টি ছাড়া ভালো স্বাস্থ্য সম্ভব নয় আর পুষ্টি লাভ করার জন্য স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার প্রয়োজন। আপনার খাদ্য তালিকার মধ্যে লবণ, চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার থাকতে হবে, তবে লক্ষ রাখবেন যেন তা অতিরিক্ত হয়ে না যায়। এই তালিকার মধ্যে যেন ফলমূল ও শাকসবজিও থাকে আর খাবারে যেন বৈচিত্র্য থাকে। পাউরুটি, সিরিয়াল, পাস্তা অথবা চাল কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে লেখা উপকরণের তালিকা দেখে নিন, যাতে আপনি ভুসিযুক্ত খাবার বেছে নিতে পারেন। ভুসি ছাড়ানো শস্য থেকে তৈরি খাবারের বিপরীতে এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ফাইবার থাকে। প্রোটিন পাওয়ার জন্য অল্প পরিমাণ এবং কম চর্বিযুক্ত মাংস খান আর সপ্তাহে অন্ততপক্ষে কয়েক বার মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। কিছু দেশে উদ্ভিদ থেকে প্রস্তুত এমন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার পাওয়া যায়। আপনি যদি শর্করা-জাতীয় খাবার এবং প্রচুর চর্বি রয়েছে এমন খাবার খুব বেশি খান, তা হলে আপনি অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে শর্করা রয়েছে, এমন পানীয়ের পরিবর্তে জল খান। শর্করা-জাতীয় ডেজার্টের পরিবর্তে বেশি করে ফল খান। যে-খাবারগুলোতে প্রচুর চর্বি রয়েছে সেগুলো কম খান, যেমন সসেজ, মাংস, মাখন, কেক, চিজ ও কুকিজ। আর রান্নার জন্য মাখন অথবা ঘি ব্যবহার করার পরিবর্তে, স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো এমন তেল ব্যবহার করুন। আপনার খাদ্য তালিকার মধ্যে যদি এমন খাবার থাকে, যেগুলোতে অতিরিক্ত লবণ বা সোডিয়াম রয়েছে, তা হলে সেটা আপনার রক্তচাপ মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনার যদি এই সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে সোডিয়ামের মাত্রা কমানোর জন্য প্যাকেটজাত খাবারের গায়ে উপকরণের তালিকা দেখে নিন। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য লবণের পরিবর্তে বিভিন্ন পাতা বা মশলা ব্যবহার করুন। আপনি কী খান, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, এর পাশাপাশি আপনি কতটা খান, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, খাওয়ার সময় খিদে শেষ হয়ে গেলেও খেতে থাকবেন না। পুষ্টির সঙ্গে ফুড পয়জনিংয়ের বিষয়টাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেকোনো খাবারেই আপনার ফুড পয়জনিং হতে পারে, যদি তা ভালোভাবে তৈরি করা ও সংরক্ষণ করা না হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- র (WHO) রিপোর্ট অনুসারে এইরকম খাবার খাওয়ার কারণে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ লোক অসুস্থ হয়। যদিও অনেকে এগুলোর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়, কিন্তু এগুলোর ফলে কেউ কেউ তাদের প্রাণ হারায়। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য আপনি কী করতে পারেন? শাকসবজিতে হয়তো সার দেওয়া থাকতে পারে, তাই সেগুলো ব্যবহার করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।