নিপা ভাইরাস প্রথম নজরে আসে মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে। সেই সময় মালয়েশিয়ার আচেহ প্রদেশের নিপাহ গ্রামে শূকর পালকদের মধ্যে এ ভাইরাসজনিত রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়। মালয়েশিয়ায় শূকর থেকে মানুষের শরীরে নিপা ভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমিত হয়েছিল। গ্রামটির নামানুসারেই রোগটির নাম দেওয়া হয় নিপা ভাইরাস। এ রোগ শুধু শূকরের দেহে নয়, বাদুড়ের শরীরেও থাকে। বাদুড়ের লালা ও প্রস্রাবের মাধ্যমে এসব ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বেশ কয়েকবার তা মহামারী আকার ধারণ করেছিল।
লক্ষণ : নিপা ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। ভাইরাসগুলো শরীরে প্রবেশ করার ৪ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ইনফ্লুয়েঞ্জারের মতো জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি ইত্যাদি থেকে শুরু করে মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়াÑ এসব লক্ষণ দেখা দেয়। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ রোগীই মারা যায়। বেঁচে যাওয়া রোগীদের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্নায়বিক দুর্বলতা থেকে যায়।
যেভাবে ছড়ায় : আমাদের দেশে শীতকালে বিশেষভাবে খেজুরগাছ কেটে তাতে রাতে হাঁড়ি বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। সেই হাঁড়ি থেকে রাতে বাদুড়ও রস পান করে থাকে। এ সময় বাদুড়ের লালা থেকে নিপা ভাইরাস হাঁড়ির রসে চলে যায়। বাদুড়ের প্রস্র্রাব দিয়েও খেজুরের রস সংক্রমিত হতে পারে। এ ছাড়া গাছে বাদুড়ে খাওয়া ফলেও নিপা ভাইরাস প্রবেশ করে। বাদুড়ের লালা বা প্রস্রাব দিয়ে সংক্রমিত খেজুরের রস কিংবা বাদুড়ে খাওয়া ফলমূল খেলে নিপা ভাইরাস মানবেেদহে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে খেজুরের রস পান করার মাধ্যমেই এ ভাইরাসজনিত মহামারীগুলো সংঘটিত হয়েছিল।
চিকিৎসা : নিপা ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। চিকিৎিসা দিতে হয় লক্ষণের ওপর ভিত্তিক করে।
প্রতিরোধ : নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো টিকা নেই। যেহেতু সংক্রমিত খেজুরের রস ও বাদুড়ে খাওয়া ফলমূলের মাধ্যমে ভাইরাসগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে থাকে, তাই কাঁচা খেজুরের রস পান ও বাদুড়ে খাওয়া ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খেজুরের রস ভালো করে ফুটিয়ে নিলে এ ভাইরাস মারা যায়। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ভালো করে ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিতে হবে।
উৎসঃ আমাদের সময়