হঠাৎ করে যখন আপনি কোন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যান এবং পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে নয় বরং বিপদের আভাস দেয়, তখন সে পরিস্থিতি আপনার জন্য ভীতির সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার।অধিকাংশ লোকই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। ঠিক কি কাজটি করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা যায় তা করতে পারে না। বরং আকস্মিক ক্রোধ,ভয়,আবেগ,হতাশা নিজের দূর্ভাগ্যকে ডেকে আনে। তৈরি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির,যা জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনে। এসব অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আয়ত্তে না আনতে পারলে আপনার ভাবমূর্তিতে কিংবা কোন লক্ষ্য অর্জনেও প্রভাব ফেলে। এমনকি আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকিও ঘটায়।
পৃথিবিতে এমন অনেক সাফল্য অর্জনকারী ব্যক্তি রয়েছেন যারা তাদের তাৎক্ষনিক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রন না করার ফলে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় পোঁছাতে পারেনি। আবার অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা পরিস্থিতির চাপ না সামলানোর কারনে সফল হতে পারে না। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও রয়েছেন যারা তাদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাদের জীবনের এমন বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র তাদের চাপ সামলাতে না পারা,ভুল সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্তহীনতার ফলে।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন সময় আসে যে সময়গুলো সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগায়। নানান ‘যদি’, ‘কিন্তু’র ফলে ঠিক কি করা উচিত তা সবাই বুঝতে পারে না। সেই সময়গুলো প্রত্যেক মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো আপনার জীবনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সেই সময়গুলো আপনি নিজেকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন তার ওপর। আবার আপনার জীবনে চলার পথে এমন সব তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের অভাব বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভাবে আপনাকে অপ্রীতিকর ও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। ঠিক সেই সময়গুলোতে আপনার উচিত এমন সব পন্থা অবলম্বন করা যাতে সেই বিপদাসংকুল সময়গুলো উতরানো সম্ভব হয়। আর এমনি ৭ টি পন্থা আপনার সামনে উপস্থাপন করছি যা আপনাকে প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
১. স্থিরতা বজায় রাখুন
সংকটাসম্পন্ন সময়ে অবশ্যই বিবেকাসম্পন্ন হয়ে উঠতে হবে। উত্তেজিত না হয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত যেন নিজের ও অপরের জন্য হানিকর অবস্থার সৃষ্টি না হয়। তৎক্ষণিকভাবে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে প্রথমে নিজেকে উত্তেজিত বা ভীত সন্ত্রস্ত হওয়া থেকে সংযত রাখতে হবে। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করতে হবে কী কী উপায়ে নিজেকে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়। আপনি যদি নিজের সংকটাপন্ন সময়ে নিজেকে স্থির রাখতে না পারেন তবে পরিস্থিতি আপনার বিরুদ্ধাচারণ করবে অবশ্যই। যা আপনার জন্য মোটেও স্বস্তিকর হবে না।
২. ইতিবাচক ধারণা পোষণ করুন
আপনি যখন মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাবেন তখন আপনার মাঝে হাজারো রকম প্রশ্ন ঘোরাফেরা করবে। সেই প্রশ্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি অর্থ বহন করবে। আপনাকে অবশ্যই নেতিবাচক ধারণা ঝেড়ে ফেলে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতে হবে। কারণ, নেতিবাচক ধারণা আপনাকে আরও ভীত করে তোলে। এটা আপনার সমস্যা সবাধানের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করে। যার ফলে নেতিবাচক ধারণা আপনার উদ্ভুত পরিস্থিতির সংকট থেকে আরও সংকটাপন্ন করে তোলে।
অপরদিকে, ইতিবাচক ধারণা আপনার মনে আত্মবিশ্বাসের যোগান দেয়। আর এই আত্মবিশ্বাস আপনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তাই নিজেকে সকল প্রকার নেতিবাচক ভাবনা-চিন্তা থেকে বিরত রেখে ইতিবাচক পরিস্থিতিতে নিজেকে চালনা করুন। সেটা যত সূক্ষ্ম বিষয়ই হোক না কেন। দেখবেন, আপনার প্রতিকূল পরিস্থিতির সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।
৩. সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন না
মানুষ উদ্ভুত অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। আসলে সে বুঝতে পারে না তার সেই সময়ে ঠিক কী করা উচিত। এক কথায় মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। আপনি যখন কোনো অপ্রিতিকর অবস্থার সম্মুখীন হন প্রথমে আপনাকে ঘটনা বিশ্লেষণ করতে হবে।এর পরেই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরিস্থিতি সমাধানে আপনার ঠিক কী কী করা উচিত।
আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তবে তা হবে আপনার জন্য অত্যন্ত ভয়ানক। কারণ ‘সময়’ আপনাকে কখনই অতিরিক্ত সময় দিবে না। তাই পরিস্থিতি আপনার আয়ত্তে থাকতে সিধান্ত নেওয়া জরুরী।
৪. শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন
জীবনের সকল সুখের আঁধার আপনার স্বাস্থ্য। মানুষ তখন স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারে যখন তার সকল ইন্দ্রিয় সচল থাকে। আর স্বাস্থ্যহানি তার ব্যঘাত ঘটায়। স্বাস্থ্যহানির ফলে মানুষের মেজাজ উগ্র হয়ে যায়। ক্রোধ বাড়ায় এমনকি মানসিক অশান্তি বৃদ্ধি করে। মানসিক চাপের ফলে মানুষ হতাশা, বিষন্নতায় ভোগে। যখন মানুষের এসব মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় তখন তারা নিজের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু সুস্বাস্থ্যের ফলে মানুষের শরীর ও মন ভালো থাকে এবং ইন্দ্রিয় চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৫. বিশ্বস্ত বন্ধুর বা পরামর্শদাতার শরণাপন্ন হোন
মানুষের জীবনের বন্ধু কিংবা শুভানুধ্যায়ীরা আশীর্বাদ হয়ে আসে। জীবনের সকল সুখ, দুঃখ, আনন্দ কাছের বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। তাই আপনার সংকটাপন্ন সময়ে ভালো বন্ধুর শরণাপন্ন হতে পারেন। আপনার বন্ধু হয়তো আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে দিতে পারে। এছাড়াও আপনার বিশ্বস্ত কোনো শুভানুধ্যায়ী কিংবা পরামর্শদাতার শরণাপন্ন এক্ষেত্রে তারা আপনার পথ-প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। তারা আপনার উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে।
৬. পক্ষপাতিত্ব থেকে বিরত থাকুন
চলার পথে এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যার কারণে উভয় সংকটের সৃষ্টি। উভয় সংকট বলতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে যেকোনো এক পক্ষে অবস্থান আপনার জন্য সংকট বয়ে আনে। এক্ষেত্রে আপনাকে যেকোন পক্ষের ঊর্ধ্বে থেকে নিজের সংকটকে মোকাবিলা করতে হবে। পারতপক্ষে, আপনি নিরপেক্ষ থেকে সংকটাপন্ন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। কিংবা কোন প্রকার বিতর্কে না জড়ানো হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
৭. ভয়কে জয় করুন
মানুষ অধিকাংশ বিপদাসংকুল সময়ে ভীত হয়ে পড়ে। ভীতি মানুষের পুরো পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। ফলে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসহীনতার সঞ্চার ঘটে। এতে করে মানুষ তার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায় না। ফলে কেউ তার বিপদকে জয় করবে সেই সাহসটুকু আর পায় না। যার ফলে তাকে কোনো কিছু না ভেবে কাজ করে অবিমৃষ্যকারীতার পরিচয় দিতে হয়। আর এর পরিণাম কখনই ভালো হয় না। তাই প্রতিকূলতাকে জয় করতে হলে আগে নিজ ভয়কে জয় করা প্রয়োজন। তবেই সংকটাপন্ন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিজের জয় সম্ভব।