সুপার ক্লাস্টারঃ “সুপার ক্লাস্টার” হল আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিশাল বস্তু। কতগুলো ছোট ছোট ক্লাস্টার বা অনেকগুলো গ্যালাক্সি মিলে একটি “সুপার ক্লাস্টার” গঠিত হয়। আমাদের “মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি” যে সুপার ক্লাস্টার এর অন্তর্গত তার নাম -“Laniakea Supercluster”।আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০ মিলিয়ন সুপারক্লাস্টারের সন্ধান পেয়েছেন। “Colossal Ring of Galaxies” হল দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্তু বা সুপারক্লাস্টার। এর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দূরত্ব প্রায় ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ! গ্যালাক্সি ক্লাস্টারঃ ক্লাস্টার হল দৃশ্যমান মহাবিশ্বের দ্বিতীয় বড় বস্তু। ১০০ থেকে ১০০০ গ্যালাক্সি মিলে গঠিত হয় এক একটা গ্যালাক্সি ক্লাস্টার।গ্যালাক্সি ক্লাস্টা্র হল- গ্যালাক্সিদের একটা লোকাল গ্রুপ। সুপারক্লাস্টার যদি ১০ মিলিয়ন হয় তবে গ্যালাক্সি ক্লাস্টার কয়টা হবে চিন্তা করে দেখেন! গ্যালাক্সিঃ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে সঠিক হিসাব অনুযায়ী আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে অন্ততঃপক্ষে ১৭০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে। ছোট বড় অনেক অনেক নক্ষত্র মিলে গঠিত হয় এক একটি গ্যালাক্সি। যেমন আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কথা যদি ধরি, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে, কোন কোন গ্যালাক্সিতে এই সংখ্যা ৪০০ বিলিয়ন। [বিঃদ্রঃ বাংলায় ছায়াপথ শব্দটা এড়িয়ে গেলাম] নক্ষত্রঃ আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে নক্ষত্র কতটি হতে পারে? নক্ষত্রগুলোকে তাদের তাপমাত্রা এবং স্পেক্ট্রার উপর ভিত্তি করে ৭ টা ভাগে ভাগ করা হয়। O, B, A, F, G, K এবং M। যেমন আমাদের সূর্য G2V টাইপের হলুদ বামন নক্ষত্র। সূর্যের চেয়েও অনেক বেশি গুণ বড় নক্ষত্রের সন্ধান মিলিছে অহরহ আমাদের এই দৃশ্যমান মহাকাশ ! আর হ্যাঁ, নক্ষত্রের সংখ্যাটা হল – ১০০ অক্টিলিয়ন সোজা কথায় ১ এর পরে ২৯ টা শূন্য বসায় দিলে হবে! কোয়াসারঃ কোয়াসার বা Quasar নামক বস্তুটিকে ধরে নেওয়া হয় আমাদের মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তু। Quasar মূলত Quasi-stellar radio source নামের সংক্ষিপ্ত রুপ যার অর্থ “আংশিক মাত্রায় নাক্ষত্রিক”। এরা আকারে গ্যালাক্সিদের চেয়ে ছোট হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি গ্যালাক্সির তুলনায় প্রায় ১০০ থেকে ১০০০ গুণ বেশি আলো উৎপন্ন করে থাকে আমাদের মহাবিশ্বে। সুপারনোভাঃ Supernova বাংলায় সুপারনোভা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অনেক ভালো জানি। অতিবিশাল বিস্ফোরণমুখী নক্ষত্রগুলোকে সুপারনোভা বলা হয়। যে মুহুর্তে এরকম বিশাল নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে তার ঠিক আগে এটি প্রচন্ড পরিমাণে শক্তি নির্গত করে, এর ফলে আগের তুলনায় লক্ষ-কোটিগুণ বেশি আলোকিত হয়ে ওঠে। এরপর ক্রমশ সংকুচিত হয় মৃত-নক্ষত্রে পরিণত হয়। সত্যি বলতে গেলে এই সুপার নোভার বুক ফেটেই আমাদের দেহ গঠনকারী মৌলগুলো জন্ম নেয়। আমরা সুপারনোভার সন্তান বললে মোটেই ভুল হবে না! ব্ল্যাক হোলঃ ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর যাই বলি এই টার্মটা বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষদের কাছে এত কমন যে নতুন করে কিছুই বলার নাই। সূর্যের চেয়েও বহুগুণে ভারী নক্ষত্র বা অনেকগুলো নক্ষত্রপুঞ্জ গ্র্যাভিটেশনাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে কৃষ্ণ গহ্বরের সৃষ্টি হয়। বড় বড় কিছু নক্ষত্রের জন্য এটাই চূড়ান্ত পরিণতি। এক্ষত্রে বিস্ফোরণ কিন্তু বাইরের দিকে হয় না বরং ভিতরের দিকে হ্য়, ফলে এর ঘনত্ব এত বেড়ে যায় যে, গ্র্যাভিটির টানে আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে না এর কবল থেকে। নীহারিকাঃ নীহারিকা বা Nebula যাই বলি, ধুলা-হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও অন্যান্য গ্যাস দিয়ে গঠিত দানব আকৃতির দ্যূতিময় মেঘ। বহুবচনে Nebula কে Nebulae বলা হয়। আশেপাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলোতে এরা আলোকিত হয়। এই পর্যন্ত তিনশোরও বেশি নীহারিকার নামকরণ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ধুমকেতুঃ যার ইংরেজী নাম “Komet” গঠিত হয় জমাট বেঁধে বরফ হওয়া গ্যাস আর ধূলিকণা দিয়ে। সূর্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এটি উত্তপ্ত হয়ে গ্যাস মুক্ত করে এবং অস্পষ্ট অবয়ব তৈরি করে। এই অস্পষ্ট অবয়বকে আমরা ধুমকেতুর লেজ হিসেবে জানি। উল্কাঃ ইংরেজীতে যাকে বলা হয় “Meteor” । উল্কা ধুমকেতু, গ্রহ, চাঁদ বা গ্রহাণূর খন্ডিত অংশ। ধারণা করা হয়, প্রতিদিন কোটি কোটি উল্কা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠে পৌছার আগেই বাতাসের সাথে সংঘর্ষে ধ্বংস হয়। যেগুলো ধ্বংস হয় না সেগুলো ভূ-পৃষ্ঠে এসে আঘাত করে এবং এগুলো উল্কাপিন্ড নামে পরিচিত। আমাদের দৃশ্যমান মহাকাশ আরও অনেক বস্তু নিয়ে গঠিত।
আ ক ম আজাদ আস্ক প্রশ্ন ডটকমের সাথে আছেন সমন্বয়ক হিসাবে। বর্তমানে তিনি একজন শিক্ষক। আস্ক প্রশ্ন ডটকমকে বাছাই করে নিয়েছেন জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হিসাবে। ভবিষ্যতে একজন বক্তা ও লেখক হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই আশা পূর্ণতা পেতে সকলের নিকট দু'আপার্থী।