বাবা বলা হয় সাধরণত দুভাবে, (১) স্বাভাবিকভাবে সম্মানের খাতিরে ক্ষেত্র বিশেষ বাবা বলা হয়; (২) নিয়মিত বাবা বলে সম্বোধন করা। যেমন, অনেক সময় আমরা বাসে বা রাস্তায় বলে থাকি যে, বাবা একটু জায়গা দিনতো (এটা প্রথম প্রকারের উদাহরণ)। আবার পীর সাহেবদেরকে অনেকে বাবা বলে ডেকে থাকে। এটা দ্বিতীয় প্রকারের উদাহরণ। এ বিষয়ে আমরা কুরআন হাদীছ থেকে জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও’। -(আল-হুজুরাত; ৪৯:৯) সহীহ হাদীছে বলা হয়েছে, ﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﺧُﻮ ﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻢِ অর্থাৎ এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। -(বুখারী-২৪৪২, হাদীছটি সহীহ) অনেকে বলতে পারে চাচাকে কি বাবা ডাকা যায়? হ্যাঁ, বলা যায়। কেননা হাদীছে বলা হয়েছে, ﻋَﻢَّ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﺻِﻨْﻮُ ﺍﻟْﺄَﺏِ অর্থাৎ চাচা বাবার মতোই। -(আবূ দাঊদ-১৬২৩, আলবানী ও আল-আরনাঊত বলেন, হাদীছটি সহীহ) বাবা বলে ডাকতে হয় সাধারণত তিনটি সম্পর্কের কারণে, (১) রক্ত সম্পর্কের কারণে, (২) দুধ সম্পর্কের কারণে (দুধ মাতার স্বামী), বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে। যদিও আরবরা শ্বশুরকে চাচা বলে থাকে। আমরা উপরের হাদীছে জেনেছি, চাচা বাবার মতোই। অনেকে নিচের আয়াতটি দিয়ে দলীল পেশ করে যে, পীরকে বাবা বলা যাবে। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হল তখন কি তোমরা উপস্থিত ছিলে, যখন সে নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলঃ আমার পরে তোমরা কোন্ জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা তোমার উপাস্যের এবং তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্য – সেই অদ্বিতীয় উপাস্যের ইবাদাত করব এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব’। -(আল-বাকারাহ; ২:১৩৩) অথচ উল্লিখিত আয়াতে পূর্ব পুরুষের বা পিতৃপুরুষের পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এখানে কোনো জীবিত মানুষকে বাবা বলে যাকতে বলা হয়নি। এছাড়া পূর্ব পুরুষের অনেকে কাফের ছিলো। তাই শুধুমাত্র মু’মিনদের পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। যদি পূর্ব পুরুষদেরকে বাবা বলার দলীল এখান থেকে নেওয়া হয়, তাহলে এ উপমহাদেশের প্রায় সকলের পূর্ব পুরুষ ছিলো হিন্দু; তাহলে কি এখন হিন্দুদেরকে বাবা বলে ডাকতে হবে। আর ইব্রাহীম (‘আলাইহিস সালাম) আমাদের বাস্তবিক অর্থেই বাবা। আল্লাহ বলেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত; তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম’। -(আল-হাজ্জ; ২২:৭৮) আদম (‘আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‘হে বানী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শাইতানের দাসত্ব করনা, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’? –(ইয়াসীন; ৩৬:৬৫) অতএব শ্বশুর, দুধপিতা, নিজ পিতা ছাড়া কাউকে বাবা বলা জায়েয নয়। কেননা মু’মিনগণ পরষ্পর ভাই ভাই। যাকে তাকে বাবা বলা কুরআন হাদীছ বিরোধী বিষয়। যদি কেউ বলে কুরআনেতো নিষেধও করা হয়নি? এর সহজ উত্তর হলো, আয়িশাহ্ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, কানা খুলুকুহুল কুরআন অর্থাৎ কুরআনই ছিলো তাঁর চরিত্র (আহমাদ-২৪৬০১, আল-আরনাঊত বলেন, হাদীছটি সহীহ)। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কোনো সাহাবী বাবা বলে ডাকতেন না। প্রশ্ন হচ্ছে পীর সাহেবরা কি সে আদর্শের সবক দেয়ার পরিবর্তে খ্রিষ্টানরা যেভাবে তাদের ধর্মগুরুকে ফাদার তথা বাবা বলে ডাকে সে আদর্শেরই সবক দিয়ে থাকে? তাহলে খ্রিষ্টানদের সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায়? অথচ হাদীছে তাদের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে, ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ অর্থাৎ যে সম্প্রদায়ের সাথে যে সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা থাকবে কিয়ামতে তাদের সাথেই তারা থাকবে (যার সাথে যার মহব্বত তার সাথে তার কিয়ামত)। -(আবূ দাউদ-৪০৩১, আলবানী ও আল-আরনাঊত বলেন, হাদীছটি সহীহ)
আ ক ম আজাদ আস্ক প্রশ্ন ডটকমের সাথে আছেন সমন্বয়ক হিসাবে। বর্তমানে তিনি একজন শিক্ষক। আস্ক প্রশ্ন ডটকমকে বাছাই করে নিয়েছেন জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হিসাবে। ভবিষ্যতে একজন বক্তা ও লেখক হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই আশা পূর্ণতা পেতে সকলের নিকট দু'আপার্থী।