আস্ক প্রশ্নে আপনাকে স্বাগতম ! এটি একটি প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক কমিউনিটি। এই সাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন ...
251 বার প্রদর্শিত
"জীব বিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (2,799 পয়েন্ট) 164 423 438

1 উত্তর

0 পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন (386 পয়েন্ট) 18 73 88
সম্পাদিত করেছেন
মেডিকোলিগ্যাল ময়না তদন্ত করার জন্য দেহের বাহ্যিক ও ভিতর ভাল করে পরীক্ষা করতে হয়। বাহির দেখার সময় সাধারণত একজন রোগীকে আমরা যেভাবে পরীক্ষা করি তার সবই দেখতে হয়। এর সাথে কোন বিশেষ আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা তার দিকে নজর দিতে হয়। আঘাত থাকলে তার বিস্তারিত বর্ননা লিপিবদ্ধ করতে হয়। লিপিবদ্ধ করারক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ টি এনাটমিক্যাল ল্যান্ড মার্ক থেকে তার অবস্থান বর্ননা করা প্রয়োজন। সাথে আঘাতের বয়স এবং কি ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তার উল্লেখ করা অতীব জরুরি। দেহের ভিতরের পরীক্ষা করার জন্য দেহের ৩ টি ক্যাভিটি কাটা বাধ্যতামূলক। মাথার খুলি, বুকের খাঁচা এবং পেট এই ৩ ক্যাভিটি কেটে দেখা আবশ্যিক। কেউ ময়নাতদন্ত করার সময় যদি এই ৩ ক্যাভিটি না কাটেন বলে প্রমানিত হয়, তবে পেশাগত অবহেলার দায়ে শাস্তি যোগ্য অপরাধ করেছেন বলে ধরা হবে।

একজন চিকিৎসককে দেহের ভিতরের অংশের মেডিকোলিগ্যাল ময়না তদন্ত করার সময় কিছু বিষয় নজর দিতে হবে। যেমন মাথার খুলি কাটার সময় এদেশের অশিক্ষিত ডোমেরা কপালের উপর দিয়ে সার্কুলার ভাবে কাটে, চিকিৎসক তাই দেখেন। এটি মোটেই উচিত নয়। একমাত্র গলিত পচনধরা দেহের ক্ষেত্রে এই ভাবে কাটা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু অন্যক্ষেত্রে কানের পিছনের শক্ত হাড় (Mastoid process) থেকে অপর পাশের উক্ত হাড় পর্যন্ত কাটতে হবে চুলের ভিতর দিয়ে, যাতে এই কাটা কারো তেমন নজরে না আসে। এরপর মাথার চামড়া সামনে চোখের ভ্রু পর্যন্ত এবং পিছনে মাথার মাঝখান পর্যন্ত ছিলে মাথার খুলিকে গোল করে কেটে নিতে হবে। তারপর মগজের পর্দা কেটে মগজ বেড় করে দেখতে হবে।

যদি গলায় কোন আঘাতের চিহ্ন না থাকে তবে বুক ও পেট থুতনির নীচ থেকে যৌনাঙ্গের উপর পর্যন্ত লম্বালম্বি ভাবে কাটা যায়। এরপর বুকের চামড়া, মাংস ছড়ানোর পর বুকের হাড় গুলোকে আলাদা আলাদা করে ভাংগা আছে কিনা পরীক্ষা করা যায়। এরপর কশেরুকা বরাবর দুইদিকে কেটে সেগুলোকে সরিয়ে নিলেই বুকের খাঁচা ওপেন করা হয়ে যায়। এরপর ফুসফুস ও হার্ট পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেইভাবেই পেট কেটে ভিতরের কলিজা, প্লিহা,বৃক্ক, পাকস্থলি, মুত্রথলি, যৌনাঙ্গ সমুহ পরীক্ষা করা হয়। তবে গলায় কোন আঘাতের চিহ্ন থাকলে মাথা যথাযথ ভাবে কেটে নিতে হয়। এরপর বুক ও পেট স্টারনাল নচ থেকে নীচের দিকে লম্বালম্বি ভাবে কেটে পরীক্ষা করে নিতে হয়। সবশেষে কানের পিছনের কাটা কে স্টারনাল নচের কাটা অংশের সাথে জুড়ে দিয়ে গলাকে কাটতে হয়। এই কাটা চিহ্ন দেখতে ইংরেজি অক্ষর ‘ভি’ এর মত লাগে। মনে রাখতে হবে গলায় এই স্পেশিয়াল পরীক্ষা করার আগে শরীরের রক্ত ঝরিয়ে রক্ত শূন্য করে নিতে হয়। এই গলার অংশ উপরের দিকে সম্প্রসারিত করে চোখের ভ্রুর সাথে মিলিয়ে নিলে গোটা মুখমণ্ডল ও সুন্দর করে পরীক্ষা করা সম্ভব। গোটা মুখমণ্ডল তখন মুখোসের মত খুলে আনা যায় এবং মুখচেপে হত্যা এর মত সংবেদনশিল হত্যাকাণ্ডের কারণও বেড় করা সম্ভব হয়। দেহের ভিতরের পরীক্ষার সময় সব ভিসারা গুলোতে কোন অসংগতি বা আঘাত বা রোগের লক্ষন আছে কিনা তা দেখা প্রয়োজন। আঘাত গুলোর বয়স ও কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা লেখা জরুরি।

সেইরকম কোন রোগের লক্ষন পেলে তাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা উচিত। মনে রাখতে হবে রোগের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করে তা নিশ্চিত করা উচিত। বিষের কোন সন্দেহ বা উপসর্গের কথা জানা গেলে নিম্নোক্ত ভিসারাগুলি সাধারনত সংরক্ষন করা হয়।

১ম বয়ামেঃ পাকস্থলি ও এর ভিতরের খাবার সমুহ, 

২য় বয়ামেঃ ১০০ গ্রামের বেশি কলিজা (ডান দিকের অংশের) ও লম্বালম্বি ভাবে দুই ভাগ করা দুই বৃক্কের অংশ ও 

৩য় বয়ামেঃ যা দিয়ে ভিসারা সংরক্ষন করা হয়ে থেকে তার নমুনা। 

আমাদের দেশে সাধারনত লবনের ঘন দ্রবন দিয়েই ভিসারা সংরক্ষন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও মৃত্যুর কারন নির্ণয়ের স্বার্থে যে কোন ভিসারা পরিক্ষার জন্য নেয়া যেতে পারে। যেমন মগজ, ফুসফুস, হাড়, রক্ত, মুত্র, জরায়ু ইত্যাদি। কখনো কখনো কিছু কিছু অংশের হিস্টোপ্যাথলজি পরিক্ষার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে সংরক্ষক হিসাবে সাধারনত ফর্মালিন ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হার্টের পরীক্ষাই করা হয়ে থাকে। ভিসারায় বিষ আছে কিনা দেখার জন্য সি আই ডি পুলিশের আধিনে ফরেনসিক কেমিকেল ল্যাবে পাঠানো হয়, যা ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত। অজ্ঞাত মৃতদেহের পরিচয় নির্নয়ের জন্য কখনো কখনো ডি এন এ পরীক্ষা করা প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে দেশের একমাত্র ফরেনসিক ডি এন এ ল্যাবের সাহায্য নেয়া হয়।

মেডিকোলিগ্যাল ময়না তদন্ত এর আরও একটি মুল্যবান অংশ লিখিত প্রতিবেদন পেশ। 

সাধারনত এই দেশে প্রতিবেদন দেবার জন্য সরকারি মুদ্রিত নির্দিষ্ট কাগজ রয়েছে। সেই কাগজেই প্রতিবেদন লিখে দেয়া হয়ে থাকে। আদালতে মাঝে মাঝে প্রশ্ন শুনতে হয় যে, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন মৃতদেহ পরিক্ষার সময় তৈরি করে সাথে আসা পুলিশের হাতেই দিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা? কিন্তু সরকারি নির্দেশনা হলো ময়না তদন্ত করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ময়না তদন্ত সম্পন্নকারি চিকিৎসক তার প্রতিবেদন লিখে তার বিভাগীয় প্রধানের কাছে জমা করবেন এবং বিভাগীয় প্রধান পরবর্তি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্বাক্ষর করে তা সংশ্লিষ্ট কর্তিপক্ষের নিকট পাঠাতে ব্যবস্থা নিবেন। অর্থাৎ প্রতিবেদন দেবার জন্য সর্ব মোট ৭২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায় এবং এই আদেশের দ্বারা বোঝা যায় মর্গে বসে হাতে হাতে প্রতিবেদন দেবার কথা অলিক চিন্তা প্রসুত। এমন আইন যদি থাকেও তা এই আদেশের দ্বারা রহিত হয়ে যায় বলেই ধরে নেয়া যাবে। মেডিকোলিগ্যাল ময়না তদন্ত একটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ বিশেষ। দেশের ন্যায় বিচারের স্বার্থে এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের দ্বারা করানো উচিত। সেলক্ষ্যে সরকারকে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত যাতে ন্যায় বিচার জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়। বিচারক, পুলিশ আইনজীবী ও চিকিতসকের সমন্বিত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া আজ সময়ের দাবী। বাংলাদেশের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগকে আরও সম্প্রসারিত করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত পদ সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন, সাথে সাথে ময়না তদন্ত কাজের জন্য আলাদা পারিশ্রমিক ধার্য করা অত্যন্ত জরুরী ।

সহজভাবে বুঝতে চাইলে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেনঃ

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
25 অক্টোবর 2019 "সাধারণ জ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Siddique (4,388 পয়েন্ট) 287 1566 1592
1 উত্তর
25 অক্টোবর 2019 "সাধারণ জ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Siddique (4,388 পয়েন্ট) 287 1566 1592

28,172 টি প্রশ্ন

29,716 টি উত্তর

3,148 টি মন্তব্য

3,956 জন সদস্য



আস্ক প্রশ্ন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে কমিউনিটির এই প্ল্যাটফর্মের সদস্যের মাধ্যমে আপনার প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান পেতে পারেন এবং আপনি অন্য জনের প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন। মূলত এটি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য একটি প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক কমিউনিটি। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।

  1. Razuanul Hoque

    50 পয়েন্ট

    0 উত্তর

    0 প্রশ্ন

  2. Zulfiker Rehman

    50 পয়েন্ট

    0 উত্তর

    0 প্রশ্ন

  3. Mehedi Hasan

    33 পয়েন্ট

    6 উত্তর

    0 প্রশ্ন

  4. Miraj Mustafa

    20 পয়েন্ট

    7 উত্তর

    1 প্রশ্ন

  5. Apon

    12 পয়েন্ট

    4 উত্তর

    0 প্রশ্ন

শীর্ষ বিশেষ সদস্য

70 টি পরীক্ষণ কার্যক্রম
...