আম পাকতে শুরু করেছে। রসালো এ ফল যেমন সুস্বাদু তেমনি কাজের। অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে আম খেতে চান না। আমে প্রচুর ক্যালরি থাকে। ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে যাঁরা আম খেতে চান না, তাঁরা নির্ভয়ে আম খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফলের রাজা আম। কারণ এটি চর্বিমুক্ত। এতে কোলস্টেরল নেই, এমনকি ক্ষতিকর লবণ নেই।
এই গ্রীষ্মের গরমে প্রতিদিন আম খেতে পারেন নির্ভয়ে। একদিনে যদি তিনটি করেও আম খান, তবে তা ৪০০ ক্যালরির সমান হলেও আপনার ওজন বাড়বে না। এর ফাইবার আপনার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করবে ও ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করবে। জুস করে আম খাওয়ার চেয়ে আস্ত আম খাওয়া ভালো। আমে যে ভিটামিন আর পুষ্টি আছে, তা অন্য খাবারের তুলনায় শরীরে আরও বেশি শক্তি জোগাবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ফ্যাটযুক্ত খাবারের বদলে আমকে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন। এতে ওজন কমবে। ম্যাংগো ডট ওআরজির তথ্য অনুযায়ী, দিনে একটি আম খেলে দৈনিক ভিটামিন সির প্রয়োজনীয়তা শতভাগ পূরণ হয়, ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হয় ৩৫ ভাগ। আর ফাইবারের চাহিদা পূরণ হয় ১২ শতাংশ।
মৌসুমি ফল আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্ক বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান’ বিভাগের প্রধান ফারাহ মাসুদা বলেন, “আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন ও ক্যালরি।” তিনি আরও জানান, উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে সরাসরি ভিটামিন পাওয়া যায় না, বিটা-ক্যারোটিন ভিটামিন এ‘র কাজ করে। এছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, যা শরীরে শক্তি তৈরি করে। আমের আয়রন, আঁশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও খনিজ উপাদান শরীর সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে।
ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে। কাঁচাআমে ৯০ মাইক্রোগ্রাম এবং পাকাআমে ৮,৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। আম কর্মশক্তি যোগায়। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচাআম ৪৪ কিলোক্যালোরি ও পাকাআমে ১০ ক্যালরি শক্তি প্রদান করে। আরও আছে আয়রন যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। কাঁচাআমে ৫.৪ ও পাকাআমে ১.৩ মি.গ্রা আয়রন পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম হাড় সুগঠিত করে, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে। কাঁচাআমে ১০ মি.গ্রা ও পাকাআমে ১৬ মি.গ্রা ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। আম থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচাআমে ৬৩ মি.গ্রা ও পাকাআমে ৪১ মি.গ্রা ভিটামিন সি পাওয়া যায় বলে জানান ফারাহ মাসুদা।
আমে রয়েছে শ্বেতসার। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচাআমে ১০.১ গ্রাম শ্বেতসার ও প্রতি ১০০ গ্রাম পাকাআমে ২০.০০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়। আমে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তস্বল্পতা দূর করে ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। এই ফলের আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্যারোটিন, আইসো-কেরোটিন, এস্ট্রাগ্যালিন, ফিসেটিন, গ্যালিক এসিড ইত্যাদি এনজাইম ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আম কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। আমের ভিটামিন সি ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, যা ব্রণের ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। তাছাড়া আম ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে। “পাকাআম আঁশসহ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়”, বললেন ফারাহ মাসুদা। পাকাআম রক্তে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ঘামের কারণে শরীর থেকে সোডিয়াম বের হয়ে যায়। কাঁচাআম খেয়ে শরীরের সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।