বিনয়াবনত ও ভক্তি সহকারে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা কারো জন্যেই মানানসই নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি আল্লাহর জন্যে করা হয়ে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও”। [সূরা বাকারাহ ২:২৩৮] আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার কারণে, মানুষের পরে অন্যতম শেষ্ঠ সৃষ্টি (ফেরেশতাগণ) শেষ বিচারের দিনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন এবং কেউ কোন কথা বলবেন না যতক্ষণ না আল্লাহ কাউকে কথা বলার অনুমতি প্রদান করেন। ( অর্থাৎ তারা দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবেন)। মহান আল্লাহ বলছেন, “যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে”। [সূরা নাবা ৩৮] যে কেউ কোন সৃষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি এই দাবী করে যে তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, তার মানে হল সে সেই ব্যক্তি বা বস্তুকে এমন একটি অধিকার প্রদান করল যা কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হক বা অধিকার। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে লোকেরা তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক তাহলে সে যেন জাহান্নামে নিজের বাসস্থান করে নেয়”। (তিরমিযি, ২৭৫৫; হাদীসটি সহীহ, আলবানী একে সহীহ বলেছেন সহীহ আল তিরমিযিতে) এর কারণ, এটি এমন একটি সম্মান এবং শক্তি ও গর্বের অংশ যা কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অধিকার। (দ্র তাফসীর আল-তাহির ওয়াল-তানভির, আল তাহির ইবন আশুর কর্তৃক ১৫/৫১) খলিফা আল মাহদি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে উপস্থিত সব লোকেরা দাঁড়িয়ে গেল কিন্তু ইমাম আবি যি’ব দাঁড়ালেন না। তাকে একথা বলা হল; দাঁড়াও, ইনি আমিরুল মুমিনিন। তিনি বললেনঃ লোকেদের কেবলমাত্র তাঁর সম্মানে দাঁড়ানো উচিত যিনি সমস্ত জগতসমূহের প্রভূ। আল মাহদি বললেনঃ “তাঁর জন্যেই তা, আমার মাথার সবগুলো চুলও যেন দাঁড়িয়ে যায়”। সিয়ার আ’লাম আল-নুবালা’ (৭/১৪৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবায়ে কিরামগণ সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব শরীরে কোন মজলিসে আগমন হলেও দাঁড়াতেন না। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘সাহাবায়ে কিরামের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলো না। অথচ তাঁরা যখন তাঁকে দেখিতেন তখন দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা জানতেন যে, তিনি ইহা পছন্দ করেন না‘। (তিরমিযি, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ) মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইহাতে আনন্দ পায় যে, লোকজন তাহার জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় স্থির হয়ে থাকুক, তবে সে যেন নিজের জন্য জাহান্নামে বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়’। (আবু দাউদ) আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম লাঠিতে ভর করে ঘর হতে বাইরে আসলেন, আমরা তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়ালাম। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা আজমী (অমুসলিম) লোকদের ন্যায় দাঁড়াইও না। তারা এইভাবে দাঁড়াইয়া একে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করে‘। (আবু দাউদ) তবে কোন প্রয়োজনে দাঁড়ানো, যেমন সা’দ (রা) অসুস্থ ছিলেন বিধায় তাঁকে সওয়ারী থেকে নামতে লোকেরা সাহায্য করেছেন, তা দূষণীয় নয়।আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন বনু কুরাইযা সা’দ ইবনে মুয়ায রাদিয়াল্লাহুর ফয়সালায় সম্মতি প্রকাশ করল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডেকে পাঠালেন। আর সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু হুজুরের গৃহের নিকটেই অবস্থান করছিলেন। তিনি একটি গাধার উপরে সওয়ার হইয়া আসিলেন। যখন তিনি মসজিদের নিকটে পৌঁছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসার সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি দাঁড়াইয়া যাও’। (বুখারী ও মুসলিম).
আ ক ম আজাদ আস্ক প্রশ্ন ডটকমের সাথে আছেন সমন্বয়ক হিসাবে। বর্তমানে তিনি একজন শিক্ষক। আস্ক প্রশ্ন ডটকমকে বাছাই করে নিয়েছেন জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হিসাবে। ভবিষ্যতে একজন বক্তা ও লেখক হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই আশা পূর্ণতা পেতে সকলের নিকট দু'আপার্থী।